লিডস ইউনাইটেড: চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে কি অভিশাপের শিকার?
ইংলিশ ফুটবলে একটি পরিচিত নাম হলো লিডস ইউনাইটেড। একসময় তারা ছিল ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা দল।
কিন্তু এখন সেই দলটির চ্যাম্পিয়নশিপের (দ্বিতীয় বিভাগ) শীর্ষে ওঠা যেন এক কঠিন পরীক্ষা। সম্প্রতি তাদের পারফরম্যান্সে লেগেছে ভাটা, যা সমর্থকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
প্রশ্ন উঠছে, সাফল্যের কাছাকাছি গিয়েও কেন বারবার পিছিয়ে পড়ছে তারা? অনেকের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, তবে কি লিডসের ওপর কোনো ‘অভিশাপ’ ভর করেছে?
গত এক মাস আগেও লিডস ইউনাইটেড ছিল উড়ন্ত ফর্মে। পরপর কয়েকটি ম্যাচে জয়, সেই সাথে দলের খেলোয়াড়দের অসাধারণ পারফরম্যান্স—সবকিছুই তাদের ফেভারিট করে তুলেছিল।
কিন্তু এরপর যেন সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। জয়ের ধারা হঠাৎ করেই থেমে যায়, এবং শীর্ষস্থান থেকে তারা নেমে আসে দ্বিতীয় স্থানে।
ফুটবল মাঠের এই উত্থান-পতন নতুন নয়। খেলোয়াড়, ম্যানেজার এবং মালিক—বদলে যান সবাই, কিন্তু কিছু বিষয় যেন একই থেকে যায়।
লিডসের ক্ষেত্রে, এই ‘কিছু’ হলো—ঐতিহ্যগত ব্যর্থতা। অতীতেও ভালো শুরুর পরও, মৌসুমের শেষে খেই হারিয়েছে তারা।
এই ‘অভিশাপের’ ধারণা লিডসের জন্য নতুন নয়। ক্লাবটির প্রাক্তন ম্যানেজার ডন রেভি-র সময়ে এই বিষয়টি বেশ জোরালো ছিল।
রেভি ছিলেন খুঁটিনাটির ওস্তাদ। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা থেকে শুরু করে দলের খেলোয়াড়দের ফিটনেস—সবকিছুতেই তিনি মনোযোগ দিতেন।
এমনকি তিনি কুসংস্কারকেও গুরুত্ব দিতেন। তার পকেটে সবসময় থাকত দুটি কাঠের টুকরা, আর সৌভাগ্যের জন্য তিনি বিশেষ পোশাক পরতেন।
একবার তো তিনি এক ভবিষ্যৎ বক্তাকে ডেকে এনেছিলেন, যিনি নাকি মাঠের চার কোণে বীজ ছড়িয়েছিলেন এবং আরও কিছু ‘গোপন কাজ’ করেছিলেন।
যদিও রেভির এই কুসংস্কারগুলো লিডসের ভাগ্য ফেরাতে পারেনি, তবে দলের ওপর এর প্রভাব ছিল গভীর। রেভির উত্তরসূরি, হাওয়ার্ড উইলকিনসন এবং মার্সেলো বিয়েলসা—তাদের কৌশল ছিল ভিন্ন।
উইলকিনসন ছিলেন বাস্তববাদী, আর বিয়েলসা ছিলেন বিস্তারিত গবেষণায় আগ্রহী। তারা দুজনেই চেষ্টা করেছেন দলের পারফরম্যান্স উন্নত করতে, কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে লিডসের ছন্দ পতনের ধারা অব্যাহত ছিল।
বর্তমান ম্যানেজার ড্যানিয়েল ফার্কের অধীনেও একই চিত্র। দলের খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা কমে আসা এবং গোলরক্ষকের কিছু ভুলের কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সম্ভবত মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমর্থকদের মানসিক চাপ। কারণ, ভালো শুরুর পরও লিডসের সমর্থকদের মনে সবসময় একটা শঙ্কা কাজ করে।
তারা যেন ধরেই নিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত হয়তো দলটিকে হতাশ হতে হবে।
তবে, ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো দলের ওপর সরাসরি ‘অভিশাপ’-এর প্রভাব থাকে না। মাঠের খেলায় মানসিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দলের খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের মধ্যে যদি নেতিবাচক চিন্তা থাকে, তবে তার প্রভাব খেলায় পড়তে বাধ্য।
লিডস ইউনাইটেডের বর্তমান পরিস্থিতি হয়তো সে রকমই কিছু। তাই, চ্যাম্পিয়নশিপের এই কঠিন সময়ে, লিডসের খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখতে হবে।
তাদের বুঝতে হবে, সাফল্যের জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, সঠিক কৌশল এবং ইতিবাচক মানসিকতা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান