আধুনিক রূপকথার জগতে, যেখানে রূপকথাগুলো নতুন মোড় নেয়, নাটালিয়া থিওডরিডুর “সোর চেরি” তেমনই একটি বই। এই বইটি পরিচিত রূপকথা ব্লুবার্ডের একটি নতুন সংস্করণ, যেখানে লেখক আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরেছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই উপন্যাসটি ইতিমধ্যে পাঠক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
“সোর চেরি” গল্পটি শুরু হয় অ্যাগনেস নামের এক নারীর জীবন দিয়ে। অ্যাগনেসকে একটি অজানা দেশে, সম্ভবত ইউরোপের কোনো অঞ্চলে, এক প্রভুর সন্তানের ধাত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
গল্পটি একজন বর্ণনাকারীর জবানিতে, যিনি মাঝে মাঝে “আমি” থেকে “তুমি”-তে পরিবর্তিত হন, যেন তিনি কোনো শিশুকে বলছেন। গল্পের মাঝে মাঝে অতীতের কিছু নারীর আত্মাও উঁকি দেয়, যারা তাদের জীবনের গল্প শোনাতে চায়।
ছোট্ট লর্ডের প্রতি অ্যাগনেসের ভালোবাসা থাকলেও, তাকে ঘিরে কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে শুরু করে। তার নখ দ্রুত বাড়ে, এবং শরীরে মাটির গন্ধ লাগে।
সময়ের সাথে সাথে এই শিশুটি এক ভয়ঙ্কর মানুষে পরিণত হয়, যে তার সঙ্গে নিয়ে আসে মহামারী এবং মৃত্যু। গল্পটি আমাদের জানায় কীভাবে অত্যাচারের বীজ বোনা হয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তা কিভাবে একটি অভিশাপের মতো বয়ে চলে।
লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে সমাজের চোখে এই অত্যাচারগুলো প্রায়ই অদেখা থেকে যায়, এবং সেই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া কতটা কঠিন।
থিওডরিডু এই গল্পে রূপকথার আবহ বজায় রেখেছেন, কিন্তু একই সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ের উল্লেখ করেছেন, যেমন নাটক এবং ফোনের কথা।
গল্পের কিছু অংশ ধোঁয়াশা তৈরি করে, যা পাঠককে সত্য ও কল্পনার মধ্যে দ্বিধায় ফেলে দেয়। গ্রিক মিথ এবং লোককথার অংশ ব্যবহার করে তিনি গল্পের গভীরতা বাড়িয়েছেন।
লেখিকা তাঁর বর্ণনায় প্রকৃতির চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, যা পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। “সোর চেরি” একই সাথে একটি ভীতি-জাগানো উপন্যাস এবং একটি রূপকথা।
একদিক থেকে দেখলে এটি একটি ভয়ের গল্প, আবার অন্যদিক থেকে দেখলে এটি একটি পুরাণ, যা একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অভিশাপের কথা বলে।
লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে অত্যাচারের ধারণাগুলো একটি অনিবার্যতার মোড়কে আবদ্ধ থাকে।
“সোর চেরি” একটি সুন্দর, কিন্তু একইসাথে হৃদয়বিদারক উপন্যাস। প্রথম পাতা থেকেই এর লেখার ধরন আমাকে মুগ্ধ করেছে।
নাটালিয়া থিওডরিডুর গল্প বলার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে, যা বইটির শেষে এসে আরও স্পষ্ট হয়। গল্পের শেষটা হয়তো আগে থেকেই অনুমেয় ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি আমাকে কাঁদিয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস