রাব্বি হত্যার দায়ে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, শোকের ছায়া

সংযুক্ত আরব আমিরাতে (United Arab Emirates – UAE) এক আদালত ইসরায়েলি-মলদোভান রাব্বি যভি কোগানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে তিন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। সোমবার দেশটির সরকারি সংবাদ মাধ্যমে এই খবর জানানো হয়েছে।

আবু ধাবির ফেডারেল কোর্ট অফ আপিলস-এর স্টেট সিকিউরিটি চেম্বারে এই মামলার শুনানি হয়। সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াম (WAM) জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে সহায়তাকারী চতুর্থ ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্তদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

খবরে প্রকাশ, গত নভেম্বরে রাব্বি কোগানকে হত্যার অভিযোগে তুরস্ক থেকে তিনজন উজবেক নাগরিককে গ্রেপ্তার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেরত আনা হয়েছিল। ইসরায়েল একে ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছে।

আদালতের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আসামিদের স্বীকারোক্তি, ফরেনসিক রিপোর্ট এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি পেশ করেন। এতে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তবে, ঠিক কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনো চলমান। এই পরিস্থিতিতে আরব বিশ্বে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে।

২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে সেই সম্পর্ক কিছুটা দুর্বল হলেও এখনো তা বহাল রয়েছে। দুবাইয়ে ইসরায়েলের একটি কনস্যুলেট এবং আবুধাবিতে দূতাবাস রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ অন্যান্য ইসরায়েলি কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের জন্য ইরানকে সরাসরি অভিযুক্ত না করলেও, ‘শক্তির অক্ষ’ (axis of evil) শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। অতীতে ইসরায়েল ইরান ও তার মিত্রদের বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করেছে।

তবে, তেহরান রাব্বির হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও সরাসরি ইরানের দিকে আঙুল তোলেনি। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের ধারণা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইরানের গোয়েন্দা তৎপরতা রয়েছে এবং সেখানে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ ইরানির ওপর তারা নজর রাখে। অতীতেও ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।

রাব্বি যভি কোগান ছিলেন ২৮ বছর বয়সী একজন অর্থোডক্স ইহুদি ধর্মগুরু। তিনি দুবাইয়ে একটি কোশার (Kosher) মুদি দোকান চালাতেন। উল্লেখ্য, কোশার হলো ইহুদিদের খাদ্যবিধি অনুযায়ী প্রস্তুত করা খাবার। আব্রাহাম চুক্তির পর থেকে ইসরায়েলিদের কাছে দুবাই বাণিজ্য ও পর্যটনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কোগান ছিলেন ‘চাবাদ লুবাভিচ’ আন্দোলনের একজন অনুসারী। এই আন্দোলনের মূল কেন্দ্র হলো নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের ক্রাউন হাইটস এলাকা।

কোগানের মরদেহ ইসরায়েলে দাফন করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সাতটি আমিরাত নিয়ে গঠিত একটি দেশ। এখানে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল।

সাধারণত আপিল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সাধারণত, এখানে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *