কথা বলল মস্তিষ্ক! পরীক্ষামূলক ইমপ্ল্যান্টে সাড়া, সাফল্যের পথে বিজ্ঞান

বাকরুদ্ধ হওয়া মানুষের জন্য নতুন আশা জাগাচ্ছে এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বিজ্ঞানীরা এমন একটি ডিভাইস তৈরি করেছেন যা মানুষের চিন্তা থেকে সরাসরি শব্দ তৈরি করতে পারে।

পরীক্ষামূলক হলেও, এই ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (মস্তিস্ক-কম্পিউটার সংযোগ) ভবিষ্যতে বাকশক্তিহীন মানুষের কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে আনতে পারে।

সম্প্রতি ‘নেচার নিউরোসায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৭ বছর বয়সী কোয়াড্রিপ্লেজিয়া (চার হাত-পা প্যারালাইসিস) আক্রান্ত এক নারীর ওপর এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়া গেছে।

১৮ বছর আগে স্ট্রোকের কারণে তিনি কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর মস্তিষ্কে এই ডিভাইস স্থাপন করা হয়।

গবেষক গোপালা আনুমানচিপল্লি জানিয়েছেন, এই ডিভাইসটি নারীর কথা বলার ইচ্ছাকে স্বাভাবিক, সাবলীল বাক্যে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রচলিত অন্যান্য ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেসে চিন্তা থেকে শব্দে রূপান্তর করতে কিছুটা সময় লাগে। এর ফলে কথোপকথনে ছন্দপতন হয় এবং অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।

নতুন এই ডিভাইস সেই সমস্যা দূর করতে সক্ষম হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পিচ অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড নিউরোসায়েন্স ল্যাবের জোনাথন ব্রুমবার্গ এই গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও এটিকে ‘আমাদের গবেষণা ক্ষেত্রের জন্য একটি বড় অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার একদল বিজ্ঞানী ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করে ওই নারীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করেন, যখন তিনি মনে মনে কথা বলছিলেন।

তাঁর আগের কণ্ঠস্বরের নমুনা ব্যবহার করে একটি সিন্থেসাইজার তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে তাঁর মস্তিষ্কের সংকেতকে শব্দে রূপান্তর করা হয়।

বিজ্ঞানীরা একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মডেল তৈরি করেছেন, যা নিউরাল কার্যকলাপকে শব্দের এককে অনুবাদ করে।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-র গবেষক আনুমানচিপল্লি বলেন, এই প্রযুক্তি মিটিং বা ফোন কল রেকর্ড করার মতো কাজ করে।

মস্তিষ্কের যে অংশে কথা উৎপন্ন হয়, সেই স্থানেই এই ইমপ্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এর ফলে সংকেতগুলো সরাসরি শব্দে রূপান্তরিত হয়।

তিনি আরও বলেন, এটি সেকেন্ডের ভগ্নাংশে কাজ করে, যা স্বাভাবিক কথোপকথনের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ব্রুমবার্গ মনে করেন, দ্রুততার সঙ্গে শব্দ তৈরি করার এই ক্ষমতা স্বাভাবিক কথোপকথনের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

কণ্ঠস্বরের নমুনা ব্যবহার করাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

গবেষণাটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ-এর অর্থায়নে আংশিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আনুমানচিপল্লি জানিয়েছেন, প্রযুক্তিটি এখনো ব্যাপকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়।

তবে, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পেলে আগামী এক দশকের মধ্যে এটি রোগীদের জন্য সহজলভ্য হতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *