মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমানোর সিদ্ধান্তের জেরে জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ (এইচএইচএস) সম্প্রতি কয়েকশ’ গবেষণা প্রকল্পের অনুমোদন বাতিল করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিল ভ্যাকসিন বিষয়ক গবেষণা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে টিকাকরণের হার কমে যেতে পারে এবং হামের মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগগুলো আবারও বাড়তে শুরু করতে পারে।
জানুয়ারী মাসের ২০ তারিখের পর থেকে এইচএইচএস-এর পক্ষ থেকে ১,৬০০ এর বেশি গবেষণা প্রকল্পের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাকসিন বিষয়ক প্রকল্পের সংখ্যাই প্রায় ৩০০।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ডগলাস ওপেল-এর মতে, এই সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তিনি আরও জানান, ভ্যাকসিন বিষয়ক গবেষণা বন্ধ করে দেওয়ার এই প্রক্রিয়া ভ্যাকসিন গ্রহণে মানুষের আগ্রহ এবং সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর নীতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। পূর্বে, ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের দ্বিধা দূর করতে এবং টিকার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে গবেষণা কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হতো।
কিন্তু বর্তমানে সেই গবেষণাগুলোর ওপর গুরুত্ব কমানো হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর মতে, ২০১৯ সালে ভ্যাকসিন গ্রহণে দ্বিধা ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি। এমন পরিস্থিতিতে, গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমানোর এই সিদ্ধান্তকে বিশেষজ্ঞরা অপ্রত্যাশিত এবং উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে যখন হাম ও হুপিং কাশির মতো রোগগুলো আবারও বাড়ছে, ঠিক সেই সময়ে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচ জন অভিভাবকের মধ্যে একজন ভ্যাকসিনের বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
এছাড়া, গত এক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লু’র প্রকোপও মারাত্মক রূপ নিয়েছিল, যার অন্যতম কারণ ছিল সব বয়সীদের মধ্যে ফ্লু টিকাকরণের হার কমে যাওয়া।
গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমানোর ফলে শুধু যে গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হবে তা নয়, বরং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মকভাবে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভ্যাকসিন হল জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে অর্থ সাশ্রয়েও সাহায্য করে।
উদাহরণস্বরূপ, ভ্যাকসিন শিশুদের জন্য দেওয়া হলে, স্বাস্থ্যখাতে প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগ করলে প্রায় ১০ ডলার সাশ্রয় হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভ্যাকসিন বিষয়ক গবেষণা বন্ধ করা হলে তা দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। কারণ, এর ফলে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়বে এবং উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পাবে।
তাই, দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত থাকে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন