ইসরায়েলের হামলায় আবারও রক্তাক্ত বৈরুত! ফুঁসছে লেবানন, বাড়ছে যুদ্ধের শঙ্কা

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আবারও বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো চালানো এই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও সাতজন।

হিজবুল্লাহর সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ারও সম্ভবনা দেখা দিয়েছে, যা চার মাস আগে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মঙ্গলবার ভোরে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে এই হামলা চালানো হয়, যেখানে কোনো ধরনের সতর্কতা ছিল না।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহর এক সদস্যকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে।

ওই ব্যক্তি ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকে ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করতে সহায়তা করছিলেন। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের নির্দেশনায় এই বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানানো হয়।

অন্যদিকে, হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এটি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাদের দেশের বিরুদ্ধে একটি ‘বিপজ্জনক সতর্কবার্তা’। প্রেসিডেন্ট আউন আরও বলেন, “ইসরায়েলের এই আগ্রাসন মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে লেবাননের বন্ধুদের সমর্থন আদায়ের জন্য আমাদের আরও প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”

বৈরুতের দাহিয়েহ্ শহরতলীতে চালানো হামলার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ওপরের তিনটি তলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের কারণে নিচে পার্ক করা গাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো বৈরুতে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া ওই চুক্তির ফলে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের অবসান হয়েছিল। এই চুক্তিতে ইসরায়েলি সেনাদের লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার কথা ছিল।

একইসঙ্গে, হিজবুল্লাহকেও লিতানি নদী এবং জাতিসংঘের নির্ধারিত অস্থায়ী সীমান্ত রেখা ‘ব্লু লাইন’ অতিক্রম করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার কথা ছিল।

তবে, উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। ইসরায়েল অবশ্য জানুয়ারিতে সৈন্য প্রত্যাহার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে এবং এখনো দক্ষিণ লেবাননের কয়েকটি পাহাড়ের চূড়া দখল করে রেখেছে।

এছাড়াও, তারা প্রায় প্রতিদিনই দেশটির ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং দাবি করছে যে হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও তাদের অস্ত্রশস্ত্রকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসরায়েলের এই ধারাবাহিক হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতাই দায়ী। ‘ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ’-এর ফেলো, ফিলিস বেনিস বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন কার্যত ইসরায়েলকে লেবানন, ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চল এবং সিরিয়ায় হামলার সবুজ সংকেত দিয়েছে।

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা এখন গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা চালানোর ঘটনার বিস্তার দেখছি, যা লেবাননেও চলছে। তারা শুধু রাজধানী শহরেই হামলা চালাচ্ছে না, বরং জাতিসংঘের বাফার জোনও সম্প্রসারিত করছে।”

বেনিস আরও বলেন, ইসরায়েল একতরফাভাবে লেবাননে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু এই চুক্তির নিশ্চয়তাকারী ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ইসরায়েলের হামলাগুলো চলতে দিচ্ছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *