নেপালের মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর বিতর্ক: শঙ্কায় ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে: নেপালের সরকার বাল্যবিবাহ নিরসনের লক্ষ্যে বিবাহের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ২০ বছর নির্ধারণ করেছিলো, যা ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি দেশটির আইনসভায় সেই বয়সসীমা কমিয়ে পুনরায় ১৮ বছর করার প্রস্তাব উঠেছে।
এই প্রস্তাবের কারণে নেপালের নারী অধিকার কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে দেশটিতে বাল্যবিবাহের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে এবং মেয়ে শিশুদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জানা যায়, দেশটির একটি সংসদীয় উপ-কমিটি বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্প্রতি বিবাহের বয়স কমানোর সুপারিশ করেছে।
তাদের যুক্তি হলো, “বাস্তবতার নিরিখে, আমরা মনে করি, বিয়ের বয়স ১৮-তে নামিয়ে আনলে আইনগত জটিলতা কমবে এবং গ্রামীণ নেপালের সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটবে।”
তবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধীরা বলছেন, এর ফলে মেয়ে শিশুদের শিক্ষা ও অধিকার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করা সংগঠনগুলোর মতে, নেপালের অনেক মেয়ে এখনো বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরিবর্তে অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়।
দারিদ্র্য, সামাজিক কুসংস্কার এবং শিক্ষার অভাব—এসবই বাল্যবিবাহের মূল কারণ।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, নেপালে এখনো ৩০ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যে ৩৭ শতাংশের বিয়ে হয় তাদের ১৮ বছর হওয়ার আগেই।
বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া মেয়েদের জীবন কতটা কঠিন, তা কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ থেকে স্পষ্ট হয়।
বার্দিয়া জেলার বাসিন্দা বালি নামের এক নারীর কথায় উঠে আসে তাঁর জীবনের করুণ চিত্র।
বাল্যকালে পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে তিনি গৃহপরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
১৩ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়, এবং এক বছর পরেই তিনি মা হন।
বালি চান, তাঁর ১৭ বছর বয়সী মেয়েটি যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, কোনো বাল্যবিবাহের শিকার না হয়।
একই জেলার ১৮ বছর বয়সী খিমা’র মা-ও চাননি তাঁর মেয়ের এমন পরিণতি হোক।
খিমাকে অল্প বয়সে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়, কারণ তাঁর পরিবার দারিদ্র্যের শিকার ছিল।
খিমা এখনো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাইলেও, তাঁর স্বামীর পরিবার সে বিষয়ে কতটা রাজি হবে, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
নেপালের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যেও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, বাল্যবিবাহের সমস্যাটি শুধু নেপালের একার নয়, বরং বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের একটি প্রধান সমস্যা।
যদিও বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবুও এখনো অনেক মেয়ে অল্প বয়সে বিয়ের শিকার হয়।
বর্তমানে, নেপালের সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-এর মতো কিছু সংগঠন মেয়ে শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে।
তবে, নেপালের আইন পরিবর্তনের এই বিতর্ক সেখানকার মেয়ে শিশুদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে কিনা, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো মনে করে, এই ধরনের পদক্ষেপ নারী অধিকারের প্রতি চরম আঘাত হানবে, যা একটি জাতির জন্য মোটেও কাম্য নয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা