নতুন প্রজন্মের কর্মক্ষেত্র: সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্লান্তি কমাতে এক নতুন ধারা?
বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে, পোশাক পরিধানের একটি নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের, অর্থাৎ ‘জেন-জি’ কর্মীরা, অফিসে যাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট, সাধারণ পোশাক বেছে নিচ্ছেন। এটিকে অনেকে ‘কর্মক্ষেত্রীয় পোশাক’ হিসেবেও অভিহিত করছেন। এই পরিবর্তনের কারণ কী? এর পেছনে কি রয়েছে কোনো গভীর ভাবনা, নাকি এটি নিছকই একটি সাধারণ প্রবণতা?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে, প্রথমে আসে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্লান্তি বা ‘ডিসিশন ফ্যাটিগ’-এর কথা। দিনের শুরুতে কী পোশাক পরবেন, এই সামান্য সিদ্ধান্ত নিতেও অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এই ক্লান্তি কমাতে একই ধরনের পোশাক পরার ধারণা নতুন নয়। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস থেকে শুরু করে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, অনেকেই এই পথে হেঁটেছেন।
স্টিভ জবস প্রতিদিন ব্ল্যাক টার্টলনেক ও জিন্স পরতেন, যাতে পোশাক নির্বাচনের মতো ছোটখাটো বিষয়ে সময় নষ্ট না হয় এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার জন্য বেশি মনোযোগ দিতে পারেন। বারাক ওবামা সব সময় গাঢ় নীল বা ধূসর স্যুট পরতেন।
তবে, জেন-জি-দের ক্ষেত্রে এই প্রবণতার অন্য একটি দিকও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে পোশাক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তারা কিছুটা রক্ষণশীলতা দেখাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন, অতিরিক্ত ফ্যাশন সচেতনতা অথবা ভিন্ন ধরনের পোশাক পরলে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা থাকে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, তরুণ কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশকে তাদের পোশাক পরিধানের কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তাহলে কি জেন-জি-দের এই ‘ইউনিফর্ম’ পরাটা নিছকই ভয়ের ফল? অনেকে হয়তো এমনটাই মনে করেন। কারণ তারা চান, অফিসে তাদের পোশাক যেন তাদের ব্যক্তিত্বের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হয়ে ওঠে। তারা চান, তাদের বস যেন তাদের পোশাকের জন্য তাদের মনে না রাখেন। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে তারা আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারেন এবং তাদের কাজ আরও ভালোভাবে করতে পারেন।
তবে, এই ধরনের পোশাক নির্বাচন কি সত্যিই একটি ইতিবাচক দিক? নাকি এটি একটি উদ্বেগের কারণ? কর্মক্ষেত্রে পোশাকের এই নতুন ধারা, একদিকে যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের চাপ কমায়, তেমনই কর্মীর সৃজনশীলতাকে হয়তো কিছুটা হলেও সীমিত করে।
তথ্য সূত্র: The Guardian