বার্মায় ভূমিকম্প: ত্রাণ আটকে সেনাদের নিষ্ঠুরতা! বাড়ছে মৃতের মিছিল

মিয়ানমারে ভূমিকম্প: ত্রাণ বিতরণে বাধা, জান্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ।

গত শুক্রবার মধ্য মিয়ানমারে ৭.৭-মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে।

ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষের আর্তনাদ, খাবার ও পানির তীব্র সংকট—সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো দ্রুত সেখানে মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানালেও, অভিযোগ উঠেছে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে—তারা ত্রাণ বিতরণে বাধা দিচ্ছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় ও সাগাইং অঞ্চল। সেখানকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করা অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক দুই চিকিৎসক জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর বাধার কারণে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী দুর্গতদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

তাদের অভিযোগ, অনেক ত্রাণ সামরিক বাহিনী বাজেয়াপ্ত করেছে।

ডাক্তার নাং উইন জানান, মান্দালয়ের কিছু এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি। এমনকি, ত্রাণ সহায়তার বিনিময়ে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতি একটি দুর্যোগ-পরবর্তী কালোবাজারির জন্ম দিয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে জাতিগত বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে। বর্তমানে দেশটির ৩০ শতাংশেরও কম এলাকার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।

যেসব অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেই, সেখানে ত্রাণকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ডাক্তার নাং উইন আরও জানান, সাহায্য নিয়ে কোনো উদ্ধারকারী দল সেখানে যেতে চাইলেও, তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে।

অনুমতি পেতে অনেক সময় লাগছে, ফলে ত্রাণ পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।

মিয়ানমারের নির্বাসিত বিরোধী দল ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি ডা. তুন আং শোয়ে বলেন, সামরিক বাহিনী বিভিন্ন চেকপোস্ট ব্যবহার করে এনইউজি ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে।

এর ফলে দুর্গত এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ছে।

শুধু ত্রাণ বিতরণেই নয়, ভূমিকম্পের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও জান্তা সরকার বেসামরিক এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মানুষ যখন চরম দুর্দশার শিকার, তখনও তারা নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন, তবে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

তার মতে, জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে জান্তা সরকার জীবন নিচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক ব্রায়োনি লাউ বলেন, “ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও মিয়ানমারের জান্তা সরকার ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। তাদের উচিত অতীতে সংঘটিত ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া।”

সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েল বলেন, অতীতেও দেখা গেছে, জরুরি পরিস্থিতিতে দেশটির সরকার নাগরিকদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি।

কোভিড মহামারীর সময় তারা ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়েছে, এমনকি ২০০৮ সালের ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের সময়ও আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছিল।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *