হ্রদ থেকে নাইজারের সেনা প্রত্যাহার: কী হতে চলেছে?

নাইজারের সামরিক জান্তা লেক চাদ অঞ্চলের জঙ্গি-বিরোধী একটি যৌথ সামরিক জোট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

মাল্টিন্যাশনাল জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স (MNJTF) নামের এই সামরিক জোটে নাইজারের এই বেরিয়ে আসা তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

২০১৫ সালে ক্যামেরুন, চাদ, নাইজেরিয়া এবং নাইজার—এই চারটি দেশ মিলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য MNJTF গঠন করে। বোকো হারাম ও এর শাখা সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই যৌথ বাহিনী বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কিন্তু সম্প্রতি নাইজারে সেনা অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গত জুলাই মাসে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর নাইজার আন্তর্জাতিক মহলে এক প্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে অপসারণের পর দেশটির নতুন সামরিক সরকার পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট ইকোওয়াস (ECOWAS) থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, তারা বুরকিনা ফাসো ও মালির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়, যেখানেও সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে।

এই তিনটি দেশ মিলে সাহেল রাষ্ট্রগুলোর জোট (AES) গঠন করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নাইজারের এই পদক্ষেপের ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়বে। বিশেষ করে বোকো হারামের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আরও শক্তিশালী হতে পারে।

এছাড়া, ইকোওয়াসের সঙ্গে নাইজারের বাণিজ্য সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সম্প্রতি, AES জোট ইকোওয়াস থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ০.৫% শুল্ক আরোপ করেছে, যা বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।

নাইজারের এই সিদ্ধান্ত প্রতিবেশী দেশ নাইজেরিয়ার সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা চুক্তিকেও প্রভাবিত করবে। উভয় দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও প্রায় ১,০০০ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

কিন্তু নাইজেরিয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নাইজার পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত হয়ে নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক মিত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তারা মনে করেন, MNJTF-এর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা পাওয়া যেত, যা এখন হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।

এই পরিস্থিতিতে, লেক চাদ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *