মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দলটির প্রতি জনগণের ধারণা বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এর প্রভাব খুব বেশি নাও পড়তে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এর জনপ্রিয়তা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ডেমোক্রেটদের ঘুরে দাঁড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান পার্টির বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে জনমতকে কাজে লাগানো। অতীতে দেখা গেছে, কোনো দলের ভাবমূর্তির অবনমন হলে, অন্য দল দ্রুতই সুবিধা অর্জন করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে দলগুলোর ভাবমূর্তির সরাসরি সম্পর্ক দেখা যায়নি। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ এবং ২০১৪ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাবমূর্তি রিপাবলিকানদের চেয়ে ভালো ছিল, কিন্তু নির্বাচনে রিপাবলিকানরা বড় জয় পেয়েছিল। তাদের মতে, হোয়াইট হাউসে থাকা দলের প্রতি জনগণের মনোভাবই এক্ষেত্রে প্রধান নির্ধারক হিসেবে কাজ করে।
বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্রেটদের প্রতি নিজেদের ভোটারদের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের মোকাবিলায় দলের নেতৃত্ব আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এছাড়া, স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যেও দলটির গ্রহণযোগ্যতা কমেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রুয়ে টেক্সেইরা সম্প্রতি বলেছেন, “ডেমোক্রেটিক পার্টি সত্যিই গভীর সমস্যায় আছে। দলের দুর্বল ভাবমূর্তি, পরিচিতি, এবং সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুধু বাগযুদ্ধ করে বা তার প্রশাসনের পতনের অপেক্ষায় থেকে সমাধান করা যাবে না।”
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলগুলোর ভাবমূর্তির একটি প্রভাব থাকে। ১৯৯৬ সালের পর থেকে, যে দলের ভাবমূর্তি ভালো ছিল, তারাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
এমরি ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞানী অ্যালান আব্রামোভিজ বলেন, “মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটাররা মূলত হোয়াইট হাউসে থাকা দলের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা যদি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট হন, তাহলে তারা প্রেসিডেন্ট এবং তার দলকে দোষারোপ করবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। এ কারণেই প্রেসিডেন্টের দল প্রায় সবসময়ই আসন হারায়।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের নির্বাচনেও একই প্রবণতা দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে, ট্রাম্প যদি তার রক্ষণশীল নীতিগুলো জোরদার করেন, তবে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে।
ডেমোক্রেটদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর পথ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারলে ডেমোক্রেটদের জন্য তা ইতিবাচক হবে। অতীতে দেখা গেছে, যখন কোনো দলের প্রতি জনগণের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, তখন অন্য দল তাদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, জর্জ ডব্লিউ বুশের পুনর্নির্বাচনের পর রিপাবলিকান পার্টি জনগণের মধ্যে ভালো অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিল। কিন্তু ইরাক যুদ্ধ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর পরিবর্তনের চেষ্টার কারণে ২০০৬ সালের মধ্যে ডেমোক্রেটরা তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
অতএব, ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। জনসমক্ষে প্রেসিডেন্টের ভাবমূর্তি দুর্বল করতে পারলে দলের জন্য তা সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন