ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গোয়েন্দা প্রধান নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার মুখে তিনি এই পদক্ষেপ নিলেন।
মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয় যে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের পরবর্তী প্রধান হিসেবে ভাইস অ্যাডমিরাল এলি শারভিটের মনোনয়ন তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
খবর অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং বৃহত্তর অঞ্চলে দেশটির সামরিক কার্যক্রমের প্রধান সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার পরেই এই সিদ্ধান্ত আসে।
সোমবার নেতানিয়াহু শারভিটকে মনোনীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট তত্ক্ষণাত্ বরখাস্ত হওয়া তৎকালীন প্রধান রোনেন বারকে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এই মনোনয়নের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি শারভিটের কিছু মন্তব্যের উল্লেখ করেন, যেখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যর্থ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসারের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
গ্রাহাম এই মনোনয়নকে ‘সমস্যাপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “এলি শারভিটের দেওয়া মন্তব্যগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অপ্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করবে। আমার ইসরায়েলি বন্ধুদের প্রতি পরামর্শ হলো, আপনারা আপনাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন এবং ভালো করে যাচাই-বাছাই করুন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলের হামলা এবং এই অঞ্চলে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে।
শারভিটকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন জোটের কিছু সদস্যের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দেয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রাক্তন নৌ কমান্ডার শারভিট ২০২৩ সালে নেতানিয়াহুর বিচার বিভাগীয় সংস্কারের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন।
এছাড়া, তিনি ২০২২ সালে লেবাননের সঙ্গে একটি জল চুক্তিকে সমর্থন করেছিলেন, যার বিরোধিতা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহুও এই নিয়োগের সমালোচনা করে বলেন, বারকে সরিয়ে শারভিটকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত সমস্যার সমাধান করবে না, বরং ভিন্ন কাঠামোতে তা বজায় রাখবে।
তিনি আরও বলেন, বার এবং শারভিট উভয়েই ‘কাপলানবাদী’ ধারণার অনুসারী, যারা মনে করেন গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য কিছু ‘প্রহরী’ দরকার, যারা জনগণের চেয়ে ভালো বোঝেন তাদের জন্য কী সঠিক।
বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ নেতানিয়াহুকে সমালোচনার কাছে নতি স্বীকার করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “শিন বেটের প্রধান নিয়োগ অন্য কোনো সাধারণ পদের মতো নয়।
কয়েকটা সমালোচনার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বদলানোর মতো কোনো বিষয় এখানে নেই। এটি সবচেয়ে পবিত্র বিষয়, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার লঙ্ঘন।”
উল্লেখ্য, গত ২১শে মার্চ রোনেন বারকে বিতর্কিতভাবে বরখাস্ত করা হয়, যার কারণ হিসেবে ‘আস্থা সংকট’-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
যদিও বার দাবি করেন, ৭ই অক্টোবরের ঘটনার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে সত্য প্রকাশে বাধা দেওয়ার জন্যই তাকে সরানো হয়েছে।
গত মাসে শিন বেট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে হামাস নেতৃত্বাধীন হামলার মোকাবিলায় তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করা হয় এবং নেতানিয়াহুকে আক্রমণের পরিস্থিতি তৈরিতে সহায়তা করার জন্য সমালোচনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবরের ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বারকে বরখাস্ত করার আগে, হামাস হামলায় দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে হয়, যাদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা