উইসকনসিন-ফ্লোরিডায় ভোট: ট্রাম্পের ভাগ্যে কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন – উইসকনসিন এবং ফ্লোরিডার ভোটের দিকে এখন সকলের নজর। এই নির্বাচনগুলো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবশালী শিল্পপতি ইলন মাস্কের রাজনৈতিক ক্ষমতা কতখানি, তা পরখ করে দেখবে।

খবর অনুযায়ী, এই নির্বাচনগুলি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর প্রভাব থাকতে পারে।

উইসকনসিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াইটি হচ্ছে রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদের জন্য। এই কোর্টের সাত জন বিচারকের মধ্যে বর্তমানে চার জন উদারপন্থী এবং তিন জন রক্ষণশীল।

এই নির্বাচনে রক্ষণশীলরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের চেষ্টা করছেন। এই পদের জন্য লড়ছেন উদারপন্থী বিচারক সুসান ক্রফোর্ড এবং রক্ষণশীল ব্র্যাড স্কিমেল।

এই নির্বাচন রাজ্যের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে গর্ভপাতের অধিকার এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর অধিকারের মতো বিষয়গুলোতে। এছাড়াও, রাজ্যের আটটি কংগ্রেসনাল জেলার সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টিও এই কোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে পারে।

বর্তমানে এই আটটি জেলার মধ্যে ছয়টিতে রিপাবলিকানদের জয়জয়কার।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিচারক পদের নির্বাচনটি এরই মধ্যে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। উভয় পক্ষের হয়ে এরই মধ্যে প্রায় ৮ কোটি ডলার খরচ হয়েছে।

ইলন মাস্ক এবং তাঁর সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠী এই নির্বাচনে ২ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন। এমনকি মাস্ক নিজে উইসকনসিনে গিয়ে ভোটারদের মধ্যে লটারি-সদৃশ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১ মিলিয়ন ডলারের দুটি চেক বিতরণ করেছেন।

মাস্কের এই বিনিয়োগ শুরু হয় মূলত, যখন টেসলা রাজ্যের একটি আইনের বিরুদ্ধে মামলা করে, যেখানে তাদের গাড়ির ডিলারশিপ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাস্কের এই পদক্ষেপ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন এবং বিচারকদের প্রতি একটি বার্তা বহন করে।

অন্যদিকে, ফ্লোরিডায় একটি বিশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মাইক ওয়াল্টজের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া আসনে নতুন প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে। ওয়াল্টজ, যিনি ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিতে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এই আসনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জশ ওয়েল এবং রিপাবলিকান প্রার্থী র‍্যান্ডি ফাইন-এর মধ্যে মূল লড়াইটি হবে। যদিও ফাইনকে এই আসনে জয়ী হওয়ার জন্য এগিয়ে রাখা হচ্ছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়েলের নির্বাচনী প্রচারণা বেশ শক্তিশালী হয়েছে।

যদি ডেমোক্র্যাটরা এই আসনটি দখল করতে পারে, তবে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে (House of Representatives) বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ, প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই সামান্য, যেখানে তাদের আসন সংখ্যা ২১৮ এবং ডেমোক্রেটদের ২১৩।

আরেকটি বিশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফ্লোরিডার একটি আসনে, যা ম্যাট গেটজের পদত্যাগের কারণে শূন্য হয়েছে। গেটজকে ট্রাম্প অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এই আসনে রিপাবলিকান প্রার্থী জিমি প্যাট্রোনিস জয়ী হবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচনগুলোর ফলাফল শুধু স্থানীয় পর্যায়েই নয়, বরং জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

বিশেষ করে, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং ইলন মাস্কের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা আরও বাড়বে। এই নির্বাচনগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক গতিপথের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *