ভূমিকম্প: মিয়ানমারের শাসকদের জন্য কি আসন্ন ধ্বংসের বার্তা?

মিয়ানমারের মান্দালয় ও সাগাইং শহরে সম্প্রতি আঘাত হানা ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দেশটির সামরিক শাসকগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।

ভূমিকম্পটিকে অনেকে দেশটির সামরিক সরকারের পতনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকেই মান্দালয়সহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস, কুসংস্কার ও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেখানকার অনেক মানুষ এই ভূমিকম্পকে শাসকদের পাপের ফল হিসেবে দেখছেন এবং একে সামরিক জান্তার শাসনের অবসান হিসেবেও মনে করছেন।

মান্দালয়ের একজন জ্যোতিষীর বরাত দিয়ে জানা যায়, ভূমিকম্পটি শুক্রবার হওয়ায় খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিতে পারে এবং জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়তে পারে। ওই জ্যোতিষীর মতে, খুব শীঘ্রই সরকারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

এমনকি ক্ষমতা পরিবর্তনের ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।

মিয়ানমারের সামরিক শাসনের ইতিহাসে কুসংস্কার ও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রভাব নতুন নয়। অতীতেও দেশটির সামরিক নেতারা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য ঐসবের ওপর নির্ভর করেছেন।

১৯৬২ সালে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল নে উইন-এর কথা অনেকেরই জানা। তিনি নাকি তার উপদেষ্টাদের পরামর্শে স্থানীয় কারেন্সি নোট পরিবর্তন করেছিলেন, কারণ তিনি নয় সংখ্যাটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করতেন।

শুধু নে উইনই নন, পরবর্তীকালে সামরিক শাসক হিসেবে পরিচিত থান শুয়েও কুসংস্কারের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের উত্তরে কৃষকদের সূর্যমুখী ফুল চাষ করতে বলেছিলেন।

ধারণা করা হয়েছিল, সূর্যমুখী ফুলের চাষ সামরিক শাসনের দীর্ঘায়ু দেবে।

ভূমিকম্পের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী ও আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, গত বছর থেকেই একজন জ্যোতিষী মান্দালয় শহরের ধ্বংসের কথা বলেছিলেন।

তিনি নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া এবং ইয়াঙ্গুনের জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারকাজে কর্তৃপক্ষের ধীরগতির সমালোচনা করেছেন অনেকে। কো লিন মাও নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তার মা ও দুই সন্তান ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন।

উদ্ধারকর্মীদের সহায়তা পেতেও তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

কো লিন মাও কর্তৃপক্ষের এই ভূমিকার সমালোচনা করে বলেছেন, দ্রুত ব্যবস্থা নিলে হয়তো তার পরিবারের সদস্যদের বাঁচানো যেত।

ভূমিকম্পের এই বিপর্যয়কালে মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকে মনে করছেন, এই ভূমিকম্প যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *