ব্রিটিশ তরুণীকে ধর্ষণ মামলা: সাইপ্রাস আদালতের রায়ে স্তম্ভিত বিশ্ব!

সাইপ্রাসের একটি আদালত পাঁচজন ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ এক তরুণীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের। প্যারালিমনি জেলার আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ সোমবার এই রায় ঘোষণা করে।

রায়ে বলা হয়, ২০ বছর বয়সী ওই নারীর সাক্ষ্য “অসংলগ্নতা” এবং “গুরুত্বপূর্ণ বৈপরীত্যের” কারণে বিশ্বাসযোগ্য নয়।

অভিযুক্ত ইসরায়েলি নাগরিকরা (যাদের বয়স ১৯ থেকে ২০ বছরের মধ্যে) দাবি করেছেন, ওই নারীর সঙ্গে তাদের যৌন সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে। তবে, ভুক্তভোগীর আইনজীবী মাইকেল পোল্যাক এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি গণমাধ্যমকে জানান, “এই তরুণী একজন সমকামী। এমন কোনো সম্ভাবনা নেই যে তিনি আগে কখনও দেখেননি এমন পুরুষদের সঙ্গে দলবদ্ধভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে রাজি হবেন।” আইনজীবী আরও জানান, আদালতের রায়ে ওই তরুণী “পুরোপুরি বিধ্বস্ত” হয়ে পড়েছেন।

অভিযোগের পর থেকে অভিযুক্ত পাঁচজন ৩রা সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল থেকে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। তাদের আইনজীবী নির ইয়াসলোভিচ ইসরায়েলের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, “এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত, যা অভিযোগকারীর বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আমাদের মক্কেলদের বক্তব্যকে সমর্থন করেছে।”

লন্ডন-ভিত্তিক আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা জাস্টিস অ্যাব্রোডের পরিচালক পোল্যাকের মতে, এই রায় সাইপ্রাসের বিচার ব্যবস্থায় বিদ্যমান “পুরুষতান্ত্রিক” মানসিকতার প্রমাণ।

তিনি আরও যোগ করেন, “সম্প্রতি, মানবাধিকারের ইউরোপীয় আদালত রায় দিয়েছে যে সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রে যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের জন্য কার্যকর সুরক্ষা নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমি এমন কোনো উন্নতি দেখিনি।” তিনি এ ঘটনার জন্য মানবাধিকারের ইউরোপীয় আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।

এর আগে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে, আয়ানা নাপায় একদল ইসরায়েলি পুরুষের হাতে সংঘটিত গণধর্ষণের শিকার হওয়া আরেক ব্রিটিশ নারী সাইপ্রিয়ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে “বিজয়” অর্জন করেছিলেন। মানবাধিকারের ইউরোপীয় আদালত রায় দিয়েছিল যে, কর্তৃপক্ষ “আবেদনকারীর ধর্ষণ অভিযোগের কার্যকর তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।”

আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে নারী অধিকার সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সাইপ্রাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে এই রায় প্রভাবিত হতে পারে।

নিকোসিয়ার (দ্বীপটির রাজধানী) মেডিটেরিয়ান ইনস্টিটিউট অফ জেন্ডার স্টাডিজের প্রধান সুসানা পাভলু বলেন, “এটি প্রমাণ করে যে, সাইপ্রিয়ট আদালত তাদের অতীতের ভুলগুলো থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। আমরা স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ।”

পাবলো আরও বলেন, আদালত এই যুক্তি দেখিয়েছেন যে, যদিও ওই নারী মাদক সেবন করেছিলেন এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল পান করেছিলেন, তবুও তার সম্মতি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল।

তিনি বলেন, “বিষয়টি বিশেষভাবে হতাশাজনক। এটা এখন আগের চেয়েও বেশি স্পষ্ট যে সাইপ্রাসের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ যৌন সহিংসতার শিকার এবং ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ও বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত।” গবেষণায় দেখা গেছে, যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা প্রায়শই “অনির্ভরযোগ্য সাক্ষী” হিসেবে বিবেচিত হন, কারণ বিচারিক প্রক্রিয়ার সময় তাদের জন্য পর্যাপ্ত মনস্তাত্ত্বিক এবং আইনি সহায়তার অভাব থাকে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *