অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন স্থাপত্য: এক ব্যতিক্রমী নির্মাণশৈলী
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যা জ্ঞানচর্চা ও স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, সেখানে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন এক আকর্ষণ। ডেভিড কোহন নামক স্থপতির ডিজাইন করা ‘গ্রেডেল কোয়াড্র্যাঙ্গেলস’ কমপ্লেক্সটি বর্তমানে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
৭২ মিলিয়ন পাউন্ডের এই প্রকল্পে রয়েছে ছাত্রাবাস, স্টাডি স্পেস, একটি মিলনায়তন এবং সংলগ্ন একটি প্রিপারেটরি স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা।
এই স্থাপত্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর ব্যতিক্রমী নকশা। ভবনের চূড়ায় স্থাপন করা হয়েছে একটি প্যাঙ্গোলিনের মূর্তি।
যেন এক পাথরের প্যাঙ্গোলিন, টিকে থাকার জন্য আকুল হয়ে টাওয়ারের উপরে বসে আছে। এই মূর্তিটি কোভিড-১৯ অতিমারীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন এই প্রাণীটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
কোহনের মতে, “আমি একটি ভবনে কীভাবে কোভিডকে চিহ্নিত করা যায়, সেই কথাটিই ভেবেছি।
ভবনটির ডিজাইন শুধু স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকেই আকর্ষণীয় নয়, এর মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও রয়েছে। কারুকার্য করা প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে অক্টোপাস, মথ এবং গোল্ডেন মোল-এর মতো বিপন্ন প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী।
স্থপতি ডেভিড কোহন বলেছেন, “আগে ভবনগুলোতে পশুপাখির মূর্তি ঔপনিবেশিক বিস্তার এবং আবিষ্কারের নতুনত্ব বোঝাতো। এখন, সেই একই প্রাণী এবং তাদের আবাসস্থল চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ঐতিহ্যপূর্ণ অক্সফোর্ডের স্থাপত্যের প্রেক্ষাপটে এই কমপ্লেক্সটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ভবনের বক্ররেখাগুলি পুরাতন তিনটি এডওয়ার্ডিয়ান ভিলার মধ্যে দিয়ে গেছে, যা এটিকে একটি স্বতন্ত্র রূপ দিয়েছে।
“এটি মারমাইট বিল্ডিং” – এমন মন্তব্য করেছেন নিউ কলেজের ওয়ার্ডেন মাইলস ইয়ং।
ভবনটির নকশার ক্ষেত্রে টলকিন এবং গাউডির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রবেশপথটি যেন একটি জাপানিজ মুন ব্রিজ, যা দর্শকদের এক রূপকথার জগতে নিয়ে যায়।
এখানকার প্রতিটি অংশ – জানালা থেকে শুরু করে করিডোর – সবকিছুই যেন একটু বেশি আকারের, যা দর্শকদের মধ্যে এক বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে।
শিক্ষার্থীরা তাদের নতুন আবাসনের ডিজাইন নিয়ে খুবই খুশি। তাদের মতে, এখানে উজ্জ্বল স্টাডি স্পেস এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পারফরম্যান্স ভেন্যু রয়েছে।
তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন, এর কারুকার্যের দিকটি যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, কাঠামোগত দিকটি ততটা পায়নি।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এই প্রকল্পটি অক্সফোর্ড কলেজের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এটি একদিকে যেমন ঐতিহ্যকে ধারণ করে, তেমনি আধুনিকতার সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়েছে, যা এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান