মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে সতর্কতা! দেশগুলো কেন এমন করছে?

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বিষয়ক সতর্কতা জারি করছে বিভিন্ন দেশ। বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার আগে আমরা সাধারণত গন্তব্য দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে ভ্রমণ বিষয়ক সতর্কতাগুলো দেখে থাকি।

কিন্তু অন্য দেশগুলো আমাদের দেশ সম্পর্কে কী ধরনের সতর্কতা জারি করছে, সে বিষয়ে আমরা খুব একটা মনোযোগ দিই না। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতি পরিবর্তনের কারণে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ নির্দেশিকা হালনাগাদ করেছে।

এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য। তাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলো হলো লিঙ্গ পরিচয়, ভিসা জটিলতা এবং সীমান্তে নিরাপত্তা পরীক্ষা।

এই পরিবর্তনগুলো এসেছে মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের পর। এই আদেশে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি হয় পুরুষ, না হয় নারী হতে পারেন।

জন্মগত লিঙ্গ থেকে ভিন্ন লিঙ্গে রূপান্তরিত হওয়ার ধারণাকে এতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এই নির্দেশের ফলে, মার্কিন পাসপোর্ট এবং ভিসা আবেদনে ‘X’ চিহ্নিত লিঙ্গ নির্ধারণের সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।

এর ফলস্বরূপ, অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের বিষয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সময় হয় পুরুষ অথবা নারী—এই দুটি লিঙ্গের একটি বেছে নিতে হবে।

যদি আপনার পাসপোর্টে ‘X’ চিহ্নিত করা থাকে অথবা আপনি লিঙ্গ পরিবর্তন করে থাকেন, তাহলে ভ্রমণের আগে মার্কিন দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া উচিত।” এই পরামর্শটি ডেনিশ নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য, যাদের ভিসা অথবা ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথরাইজেশন (ESTA)-এর জন্য আবেদন করতে হবে।

উল্লেখ্য, ESTA ভিসা মওকুফ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের ভিসা ছাড়াই ৯০ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের অনুমতি দেয়।

ফিনল্যান্ডও তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে যে আবেদনকারীর পাসপোর্টের লিঙ্গ যদি জন্মগত লিঙ্গের সঙ্গে না মেলে, তাহলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ESTA বা ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

জার্মানিও তাদের নাগরিকদের জন্য একই ধরনের নির্দেশিকা জারি করেছে।

লিঙ্গ সংক্রান্ত উদ্বেগের পাশাপাশি, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য ডকুমেন্টেশন বিষয়ক সমস্যা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়ে সতর্ক করেছে।

জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “বৈধ ESTA অনুমোদন অথবা বৈধ মার্কিন ভিসা থাকা সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিশ্চয়তা নেই।

প্রবেশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন মার্কিন সীমান্ত কর্মকর্তারা। তাই প্রবেশের সময় আপনার রিটার্ন জার্নির প্রমাণ (যেমন—ফ্লাইট বুকিং) সঙ্গে রাখা উচিত। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রতিকার নেই।

বিদেশে অবস্থিত জার্মান দূতাবাসগুলোও প্রবেশ প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবে না।” বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে তিনজন জার্মান নাগরিককে আটক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণেচ্ছু ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য তাদের পরামর্শ হালনাগাদ করেছে। তাদের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, “ভ্রমণকারীদের কেবল বৈধ ESTA বা ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা উচিত, যা তাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি রেকর্ড, ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়া অথবা ভিসার মেয়াদ সামান্য বেশি হলেও গ্রেপ্তার, আটক ও ফেরত পাঠানো হতে পারে।”

এই মুহূর্তে, যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণেচ্ছু নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে, তাদের মধ্যে বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে এবং পর্তুগালও রয়েছে।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *