আতঙ্কে ফিনল্যান্ড! মাইন চুক্তি ছাড়ার ঘোষণা, কারণ?

ফিনল্যান্ড : ল্যান্ডমাইন চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পথে, রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর পথে হাঁটা

রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ডও এবার অ্যান্টি-পার্সোনেল ল্যান্ডমাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

১৯৯৭ সালের অটোয়া কনভেনশন নামে পরিচিত এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো তাদের ভূখণ্ডে মাইন স্থাপন করতে পারে না। ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতেরি ওরপো মঙ্গলবার জানিয়েছেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে তারা এখন এই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চাইছে।

এর ফলে ফিনল্যান্ড নিজেদের সুরক্ষার জন্য আরও উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারবে।

জানা গেছে, এর আগে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোও একই পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত এই দেশগুলো রাশিয়ার সম্ভাব্য হুমকিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। ফিনল্যান্ড সম্প্রতি সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ১৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ওরপো বলেন, যদিও ফিনল্যান্ড এখনই সরাসরি কোনো হুমকির সম্মুখীন নয়, তবুও রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদে ইউরোপের জন্য একটা বিপদ।

চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পর ফিনল্যান্ড আবার তাদের সামরিক প্রয়োজনে ল্যান্ডমাইন মজুত করতে পারবে।

ফিনল্যান্ডের সরকার ২০২৯ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে দেশটির মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত ৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে।

বর্তমানে এই খাতে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৩ বিলিয়ন ইউরো বাড়ানো হবে।

অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি হলে রাশিয়া নতুন করে সামরিক শক্তি সঞ্চয় করে প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ফিনল্যান্ড রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়াকে রাশিয়া ঐতিহাসিক ভুল হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তাদের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

তিনি আরও জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই রাশিয়া-ফিনল্যান্ড সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। তবে রাশিয়া সব সময়ই ফিনল্যান্ডের প্রতিবেশী হয়ে থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অবশ্য বলেছেন, রাশিয়া-ফিনল্যান্ড সম্পর্ক এখন ‘দুঃখজনক’ অবস্থায় রয়েছে।

তবে ফিনল্যান্ড যদি সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রস্তুত।

প্রেসিডেন্ট স্টাব সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

তিনি চান, যুক্তরাষ্ট্র যেন ন্যাটোর সঙ্গে তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখে।

জানা গেছে, রবিবার প্রেসিডেন্ট স্টাব সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

সেখানে তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের সময়সীমা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে রাজি করাতে স্টাব কিছুটা হলেও সফল হয়েছেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *