শিরোনাম: নিউজম্যাক্স-এর শেয়ার বাজারে উত্থান: আমেরিকার বিতর্কিত মিডিয়া কোম্পানির ভবিষ্যৎ
যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল মিডিয়া সংস্থা নিউজম্যাক্স-এর শেয়ার বাজারে অভাবনীয় উত্থান হয়েছে। সম্প্রতি শেয়ার বাজারে তাদের প্রাথমিক গণ-উত্সারণের (আইপিও) পরেই এই ঘটনা ঘটে। এক সময়ের ১০ ডলারের শেয়ার এখন ১৩০ ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
তবে, এই সাফল্যের পেছনে যেমন উচ্ছ্বাস রয়েছে, তেমনই রয়েছে বেশ কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ।
নিউজম্যাক্স-এর উত্থান:
নিউজম্যাক্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস রুডি এই সাফল্যের পরে বেশ খুশি। তিনি বলেন, “গত নির্বাচনে আমেরিকানরা মূলধারার মিডিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা নিউজম্যাক্স-এর শেয়ার কিনে আমাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
রুডির মতে, বিনিয়োগকারীদের এই আগ্রহ তাদের কোম্পানিকে আরও বড় করতে সহায়তা করবে।
সংস্থাটির আইপিও’র কারণ:
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর, নিউজম্যাক্স-এর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মানহানির মামলা হয়। এই মামলাগুলোর খরচ মেটানোর জন্য কোম্পানিটি পুঁজি সংগ্রহের চেষ্টা করছিল।
বিশেষ করে, ডমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমস এবং স্মার্টমেটিক-এর মতো প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা মামলাগুলো ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রুডির পক্ষে এত বিশাল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা কঠিন ছিল।
তাই, তিনি শেয়ার বাজারের দিকে ঝুঁকেছিলেন।
শেয়ার বাজারের প্রতিক্রিয়া:
শেয়ার বাজারে আসার পর, নিউজম্যাক্স-এর শেয়ারের দাম দ্রুত বাড়তে শুরু করে। যদিও শুরুতে অনেকেই এই বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন, কারণ মিডিয়া জগতে তাদের অবস্থান ততটা পোক্ত ছিল না।
কিন্তু, শেয়ারের এই উল্লম্ফন তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
চ্যালেঞ্জ এবং বিতর্ক:
তবে, এই সাফল্যের মধ্যেও নিউজম্যাক্স-এর জন্য বেশ কিছু উদ্বেগের কারণ রয়েছে। মিডিয়া বিশ্লেষকদের মতে, কেবল শেয়ারের দাম বাড়লেই একটি কোম্পানির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয় না।
নিউজম্যাক্স-কে এখনো বেশ কিছু আইনি লড়াই লড়তে হচ্ছে, যা তাদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, ডমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমসের সঙ্গে তাদের মামলা এখনো চলছে।
এছাড়া, তাদের আর্থিক হিসাবও খুব একটা ভালো নয়। কোম্পানিটি গত বছর প্রায় ৭২ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি) লোকসান করেছে।
স্মার্টমেটিকের সঙ্গে মীমাংসা:
আদালতের বাইরে স্মার্টমেটিকের সঙ্গে নিউজম্যাক্সের ৪০ মিলিয়ন ডলারে (প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা) একটি মীমাংসা হয়। যদিও এর অর্ধেক তারা পরিশোধ করেছে, বাকিটা পরিশোধ করতে তাদের সময় লাগবে।
এই মীমাংসা এবং অন্যান্য আইনি খরচ তাদের লোকসানের অন্যতম কারণ ছিল।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
নিউজম্যাক্স-এর দর্শক সংখ্যা এখনো তুলনামূলকভাবে কম। তবে, শেয়ার বাজারের এই উত্থান তাদের ভবিষ্যতে ভালো করতে সাহায্য করতে পারে।
তারা তাদের অনুষ্ঠানগুলোর মান উন্নত করার চেষ্টা করছে এবং নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশের জন্য এর প্রাসঙ্গিকতা:
শেয়ার বাজারের এই ঘটনা বাংলাদেশের মিডিয়া এবং আর্থিক খাতের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিশেষ করে, একটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার আগে তার আর্থিক অবস্থা, আইনি জটিলতা এবং বাজারের পরিস্থিতি ভালোভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এছাড়া, মিডিয়া জগতে টিকে থাকতে হলে, দর্শকদের আস্থা অর্জন এবং মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করা অপরিহার্য।
বর্তমানে, নিউজম্যাক্স-এর শেয়ারের দাম প্রায় ১৩০ ডলারের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। তাদের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
এখন দেখার বিষয়, তারা এই সাফল্যের ধারা কতদিন ধরে রাখতে পারে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো কতটা সফল হয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন