ট্রাম্পের ‘মুক্তি দিবস’ শুল্ক: আতঙ্কে বিশ্ব বাণিজ্য!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২রা এপ্রিল থেকে বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন। এই পদক্ষেপকে তিনি ‘মুক্তির দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তবে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতে, যদি অন্য দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।

যদিও এই শুল্কের পরিমাণ কত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ নাকি ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কের হার বহাল থাকবে, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

এছাড়াও, ট্রাম্প এই শুল্ক সব দেশের জন্য একভাবে আরোপ করবেন, নাকি যে দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা সম্ভব, তাদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা নেবেন, তা এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি।

ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ট্রাম্পের বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘোষণার কারণে বিনিয়োগকারীরা বেশ উদ্বিগ্ন। তারা বুঝতে পারছেন না, এই শুল্কগুলি কি দীর্ঘমেয়াদে বহাল থাকবে, নাকি এটি দর কষাকষির একটি কৌশল।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে বাণিজ্য ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ করে আসছেন। তিনি মনে করেন, এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশের উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করা এবং অভ্যন্তরীণ চাকরির সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে।

একইসঙ্গে, এই শুল্কের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ভবিষ্যতে কর কমানোরও পরিকল্পনা রয়েছে তার।

ট্রাম্পের এই শুল্ক ঘোষণা তার হোয়াইট হাউসে ফেরার পর নেওয়া বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপের একটি অংশ। যদিও বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি, তবে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর অন্য দেশগুলো যে শুল্ক এবং বাণিজ্য বাধাগুলো (যেমন ভর্তুকি) আরোপ করে, তার সমান শুল্ক আরোপ করবে।

ট্রাম্প বলেছেন, এই শুল্ক ‘সব দেশের’ ওপর প্রযোজ্য হবে।

এদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই পদক্ষেপকে কানাডার শ্রমিকদের ওপর ‘সরাসরি আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই শুল্ক আরোপ করে, তাহলে কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং কানাডার ওপর এর প্রভাব সর্বনিম্ন হবে।

ইউরোপীয় কমিশনও জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। এই বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েন বলেছেন, এই শুল্ক ‘ব্যবসায়ীদের জন্য খারাপ’ এবং ‘ভোক্তাদের জন্য আরও খারাপ’ হবে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, তার সরকার শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ বিবেচনা করবে। সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির চীনের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ হেনরি গাও বলেছেন, চীনসহ কিছু দেশ হয়তো পাল্টা ব্যবস্থা নেবে, তবে অধিকাংশ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার চেষ্টা করবে।

অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে তা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে, কারণ ব্যবসায়ীরা এই খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন। গোল্ডম্যান স্যাকসও আগামী ১২ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আসার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করেছে।

অন্যদিকে, এলন মাস্ক সরকারের ব্যয় কমানোর জন্য কাজ করছেন। তার লক্ষ্য হলো সরকারি ঘাটতি থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলার কমানো।

তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়লে সুদের হার কমানো কঠিন হবে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *