গুরুতর অসুস্থতা থেকে সেরে উঠেই নতুন মিশনে পোপ, বিশ্বজুড়ে আলোচনা!

পোপ ফ্রান্সিস : অসুস্থতা সত্ত্বেও চলছে কাজ, ভেনিজুয়েলা ও পাপুয়া নিউ গিনির সন্তদের স্বীকৃতি।

ভ্যাটিকান সিটি থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, গুরুতর অসুস্থতা থেকে সেরে উঠলেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন পোপ ফ্রান্সিস। ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন তিনি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে এবং কণ্ঠস্বরও স্বাভাবিক হচ্ছে।

পোপের সুস্থতার এই সময়েও থেমে নেই তার দৈনন্দিন কার্যক্রম। জানা গেছে, তিনি নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত চ্যাপেলে প্রার্থনা করেন এবং সেরে ওঠার সময়েও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন।

এর মধ্যে অন্যতম হলো, ভেনিজুয়েলা ও পাপুয়া নিউ গিনির প্রথম সন্তদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা। এছাড়াও, ১৯১৫ সালে আর্মেনীয় গণহত্যার শিকার হওয়া একজন আর্চবিশপকেও (archbishop) তিনি এই স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগিয়েছেন।

ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার এই সংক্রান্ত ডিক্রি অনুমোদন করা হয়েছে। এই অনুমোদনগুলি পোপের বাসভবন সান্তা মার্তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে সম্পন্ন করা হয়।

সোমবার ঘোষণা করা হয়, পাপুয়া নিউ গিনির পিটার তো রট নামের এক সাধারণ মানুষকে (layman) ক্যাথলিক চার্চের ‘শহিদ’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কারাগারে নিহত হয়েছিলেন তিনি।

এছাড়াও, ভেনিজুয়েলার মারিয়া দেল মন্তে কারমেলো এবং আর্চবিশপ ইগনেশিয়াস চৌকরাল্লাহ মালয়ানকে (Ignatius Choukrallah Maloyan) সন্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আর্চবিশপ মালয়ান ১৯১৫ সালে আর্মেনীয় গণহত্যার সময় নিহত হয়েছিলেন।

জানা যায়, ওই সময় ১৩ জন যাজকসহ তিনি নিজের বিশ্বাস ত্যাগ করতে রাজি হননি, যে কারণে তাদের হত্যা করা হয়।

আর্মেনীয় গণহত্যায় প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়, যা বিংশ শতাব্দীর প্রথম গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। যদিও তুরস্ক এই গণহত্যাকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে মানতে নারাজ।

তাদের দাবি, মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হয়েছে এবং সেখানে গৃহযুদ্ধ ও অস্থিরতার কারণে মানুষ মারা গিয়েছিল।

মারিয়া দেল মন্তে কারমেলো ছিলেন যিশুর সেবকদের মণ্ডলীর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে কারাকাসের এক তরুণীর হৃদরোগ সেরে গিয়েছিল।

পোপের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে ভ্যাটিকান জানিয়েছে, তিনি ভালো আছেন এবং ভক্তদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ফুসফুসের সংক্রমণ কিছুটা সেরে উঠেছে।

তবে এই সংক্রমণ পুরোপুরি ভালো হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

পোপ ফ্রান্সিস গত ২৩শে মার্চ হাসপাতাল থেকে ফেরার পর থেকে এখনো পর্যন্ত কারো সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করেননি। তবে তার চিকিৎসক এবং রোমের একটি হাসপাতালের প্রধান গত সপ্তাহে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন এবং নিয়মিতভাবে তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পোপকে আরও দু’মাস বিশ্রাম নিতে হবে। আগামী ২০ এপ্রিল ইস্টার সানডে পালন করা হবে।

তবে পবিত্র সপ্তাহে তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

পোপ ফ্রান্সিসের অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে তিনি মানুষকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আসুন, আমরা মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার পরিবর্তে একে অপরের দিকে তাকাই।” তিনি আরও বলেন প্রযুক্তিকে বিভেদ নয়, বরং দরিদ্র, অসুস্থ ও অক্ষম মানুষের সাহায্যার্থে কাজে লাগানো উচিত।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *