রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ডের কোচ: শার্লট এডওয়ার্ডসের সাফল্যে উচ্ছ্বাস!

ইংল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেলেন শার্লট এডওয়ার্ডস। খুব দ্রুত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ECB)। খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে দারুণ সফল এই নারী ক্রিকেটের উন্নতির জন্য কাজ করতে মুখিয়ে আছেন।

২০২২ সালের আগস্টে যখন এই পদ খালি হয়েছিল, তখন শার্লট এডওয়ার্ডস আবেদন করেননি। তিনি মনে করেছিলেন, তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু তিন বছরের কম সময়ের ব্যবধানে, ইসিবি (ECB) মনে করলো তিনিই এই পদের জন্য যোগ্য। তাই দ্রুততার সঙ্গে সবকিছু গুছিয়ে, মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে তিনি নিয়োগ পান।

কোচ হিসেবে শার্লট এডওয়ার্ডসের সাফল্য ঈর্ষণীয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে নারীদের পেশাদারিত্বের যুগে, অর্থাৎ ২০২০ সাল থেকে তিনি সাউদার্ন ভাইপার্সকে পাঁচটি শিরোপা এনে দিয়েছেন। তাছাড়া, তিনি উইমেন্স হান্ড্রেড টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার উইমেন্স বিগ ব্যাশ লিগের ফাইনালে তার দল খেলেছিল। সম্প্রতি, তিনি ভারতের উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগেও (WPL) দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

সাধারণত দেখা যায়, ভালো খেলোয়াড়রা ভালো কোচ হতে পারেন না। তবে শার্লট এডওয়ার্ডস এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি খেলোয়াড় হিসেবে একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং পাঁচবার অ্যাশেজ জিতেছেন।

ইসিবি’র (ECB) নারী দলের কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে, যারা আগে নারী ক্রিকেটকে প্রশিক্ষণ দেননি, তাদের নিয়োগের একটা প্রবণতা দেখা যায়। সেখানে শার্লট এডওয়ার্ডসের এই নিয়োগ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কারণ, তিনি নারী ক্রিকেটকে ভালো বোঝেন এবং নারী ও পুরুষ দলের কোচিংয়ের মধ্যে যে পার্থক্য আছে, সেটা জানেন।

এডওয়ার্ডসের সাফল্যের মূল কারণ হলো, তিনি নারী ক্রিকেটকে ভালোবাসেন। ১৬ বছর বয়সে ইংল্যান্ড দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই নারী ক্রিকেট ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। তাকে যদি আগামীকাল পুরুষ দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়, সম্ভবত তিনি রাজি হবেন না। কারণ, নারী ক্রিকেটের জন্য তিনি নিবেদিতপ্রাণ।

ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেট সম্পর্কেও তার ভালো ধারণা আছে। ২০১৭ সালে তিনি হ্যাম্পশায়ারে চলে আসেন এবং ২০২০ সালে সাউদার্ন ভাইপার্সের কোচের দায়িত্ব নেন। এরপর তিনি অনেক তরুণ খেলোয়াড়কে খুঁজে বের করেছেন এবং তাদের দ্রুত উন্নতির জন্য কাজ করেছেন। এদের মধ্যে মাইয়া বাউচার, চার্লি ডিন, লরেন বেল এবং ফ্রেইয়া কেম্পের মতো খেলোয়াড়রা বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।

বর্তমানে, ইংল্যান্ড দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হওয়ার পর, তাদের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, শার্লট এডওয়ার্ডস জানেন, দলের জন্য কারা প্রস্তুত এবং ভবিষ্যতে ভালো করতে পারবে।

এছাড়াও, এডওয়ার্ডস কঠোর পরিশ্রমী এবং দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে কোনো আলস্য বা অজুহাত শুনতে রাজি নন। তার অধীনে, খেলোয়াড়রা বিশ্বকাপের সময় গল্ফ খেলা, ইয়টে ঘোরাঘুরি বা হোটেলে সময় কাটানোর পরিবর্তে তাদের খেলার দিকে মনোযোগ দেবে। তার এই নিয়োগ পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়, যা ইংল্যান্ড ক্রিকেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অনেকে মনে করেন, ডিনকে (Dean) পরবর্তী অধিনায়ক করা হতে পারে। কারণ, ২৪ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় দীর্ঘদিন ধরে এডওয়ার্ডসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ২০১৮ সালে তারা একসঙ্গে উইমেন্স কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছেন। তবে, এডওয়ার্ডস ভাইপার্সে (Vipers) ডিনকে অধিনায়ক করেননি। অন্যদিকে, তিনি গ্রেস স্ক্রিভেন্সের (Grace Scrivens) প্রতিও দুর্বল।

সবকিছু বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, এডওয়ার্ডস দলের সম্ভাব্য অধিনায়কদের ভালোভাবে যাচাই করতে সময় নিবেন। সম্ভবত ২১ মে থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া সিরিজে একজন অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়কত্ব করবেন।

এডওয়ার্ডসের মূল লক্ষ্য হলো, ২০২৬ সালের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা। তিনি নিজেও ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে দেশের মাটিতে ২০১৭ সালের বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখতেন। তাই, এখন কোচ হিসেবে তার দলকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেওয়াটাই তার প্রধান লক্ষ্য।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *