গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ১৫ ফিলিস্তিনি প্যারামেডিকের হাত বাঁধা ছিল, প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ১৫ জন ফিলিস্তিনি প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীর মরদেহ উদ্ধারের পর তাদের হাত বাঁধা এবং মাথা ও বুকে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফিলিস্তিনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় গত ২৩ মার্চ ভোরে একটি বিমান হামলার পর উদ্ধারকাজে গিয়ে তারা নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহতদের মধ্যে অনেকের হাত বা পা বাঁধা ছিল এবং তাদের শরীরে একাধিক গুলির আঘাত ছিল। খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক, ড. আহমেদ আল-ফাররা, নিহতদের কয়েকজনের মরদেহ হাসপাতালে আসার সময় দেখেছেন।
তিনি জানান, “আমি তিনজন মরদেহ দেখেছি। তাদের বুক এবং মাথায় গুলি করা হয়েছে। তাদের হাত বাঁধা ছিল। তাদের হত্যা করা হয়েছে।”
ড. ফাররা একটি ছবিও সরবরাহ করেছেন, যেখানে একটি নিহত ব্যক্তির হাতে বাঁধা একটি কালো সুতা দেখা যাচ্ছে।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি একটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তা এবং রাফা থেকে মরদেহ উদ্ধারের কাজে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে একজনের পায়েও আঘাতের চিহ্ন ছিল।
তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি আরও জানান, নিহতদের গণকবরে পাওয়া যায়।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহতদের হাতকড়া পরানো ছিল এবং তাদের মাথা ও বুকে আঘাত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র জেন্স লার্কে বলেছেন, “আমরা সাধারণত কথা বলতে পারি, কিন্তু মাঝে মাঝে শব্দ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এই ঘটনা তেমনই একটি।”
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে যে তাদের সেনারা কয়েকটি গাড়িতে গুলি চালিয়েছিল। গাড়িগুলো ‘আলো বা জরুরি সংকেত ছাড়া’ সেনাদের দিকে আসছিল।
তবে তারা এখন পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি যে হামাস যোদ্ধা বা অন্য কোনো জঙ্গি প্যারামেডিকদের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করছিল।
ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক ড. বাশার মুরাদ জানিয়েছেন, নিহত প্যারামেডিকদের মধ্যে একজনের হাত বাঁধা ছিল।
হামলার সময় এক প্যারামেডিক অ্যাম্বুলেন্স কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই সময় গুলির শব্দ শোনা যায়।
ড. মুরাদ জানান, কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথোপকথনে সেনাদের হিব্রু ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়, যেখানে তারা অন্তত কয়েকজন প্যারামেডিককে আটকের নির্দেশ দিচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, “গুলি খুব কাছ থেকে করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের সঙ্গে কন্ট্রোলারের কথোপকথনে তা শোনা যাচ্ছিল। সেনারা হিব্রুতে কথা বলছিল এবং গুলির শব্দও পাওয়া গেছে।”
ফিলিস্তিনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, নিহতদের প্রত্যেককে অন্তত ২০ বার গুলি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে একজনের পা বাঁধা ছিল।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ ইসরায়েল গাজায় হামাস ও অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপরই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, নিহতদের মরদেহ এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলো বুলডোজার দিয়ে বালিতে চাপা দেওয়া হয়েছিল, যা সম্ভবত হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ গোপনের চেষ্টা ছিল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
