যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অধিকার: একটি পর্যালোচনা
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক চলে। তাদের কি সেই একই অধিকার আছে যা মার্কিন নাগরিকদের রয়েছে? নাকি তাদের অধিকারগুলো সীমিত? সম্প্রতি, অভিবাসীদের অধিকার বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে তাদের অধিকারগুলো ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে একজন ব্যক্তির কিছু মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এই অধিকারগুলো সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য, তা তিনি সেখানকার নাগরিক হোন বা না হোন।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গ এবং অ্যান্টোনিন স্কালিয়া উভয়েই একমত হয়েছিলেন যে, সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো—যেমন ধর্ম, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সরকারের কাছে আবেদন জানানোর অধিকার—যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। ১৪তম সংশোধনীতে ‘নাগরিক’ শব্দের উল্লেখ নেই, বরং ‘ব্যক্তি’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে।
এর অর্থ হলো, বৈধ বা অবৈধ—যে কোনো অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তি এই অধিকারগুলো ভোগ করতে পারেন।
কিন্তু অভিবাসীদের অধিকারের বিষয়টি সবসময় এত সহজ নয়। বিশেষ করে, যখন কোনো অভিবাসীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়, তখন তার অধিকারগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
অনেক সময় অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি একটি বিশেষ সুযোগ হিসেবে গণ্য করা হয়, অধিকার হিসেবে নয়। এর কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, কোনো অভিবাসী যদি কোনো অপরাধমূলক কাজ করেন, তাহলে তার যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ বাতিল হতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে অভিবাসন নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তার প্রশাসন ভিসাধারীদের এবং গ্রিন কার্ডধারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়।
বিশেষ করে, যারা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের ভিসা এবং গ্রিন কার্ড বাতিলের মতো ঘটনা ঘটেছে। সরকার একটি পুরনো আইনের আশ্রয় নিয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির ‘যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিতি বা কার্যকলাপ’ যদি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে তার ভিসা বাতিল করা যেতে পারে।
এই ধরনের পদক্ষেপ অভিবাসীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। অনেক অভিবাসন আইনজীবী মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো অভিবাসীদের অধিকারের পরিপন্থী ছিল।
তাদের মতে, গ্রিন কার্ডধারী হলেও, সামান্য অপরাধের কারণে অনেককে আটক করা হয়েছে এবং তাদের বিতাড়িত করারও চেষ্টা করা হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফৌজদারি আদালত এবং ইমিগ্রেশন আদালতের মধ্যে পার্থক্য। ফৌজদারি আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনজীবী নিয়োগের অধিকার পান, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ পেশ করার সুযোগ থাকে এবং সাক্ষীদের জেরা করারও সুযোগ পান।
কিন্তু ইমিগ্রেশন আদালতে এই সুবিধাগুলো সবসময় পাওয়া যায় না। অনেক অভিবাসীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যারা আটক অবস্থায় রয়েছেন।
ইমিগ্রেশন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। আটক অভিবাসীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে, যার ফলে তাদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক আইন প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। তাই, অভিবাসীদের অধিকারের বিষয়টিও একটি জটিল বিষয়।
অভিবাসন আইনজীবীরা মনে করেন, অভিবাসন আদালতগুলোতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না, যা একটি উদ্বেগের বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন