আতঙ্ক! ‘মুক্তি দিবস’ উপলক্ষ্যে ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণা: ফলাফল?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মুক্তি দিবস’ শুল্ক ঘোষণার প্রস্তুতি, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন, যা অনেকের কাছে ‘মুক্তি দিবস’ শুল্ক হিসেবে পরিচিত। আগামী ২ এপ্রিল এই বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের মূল লক্ষ্য হলো—ফেন্টানিলের প্রবাহ কমানো, অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা, বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে একটি সমতা আনা, সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো। চীনের পণ্যের ওপর তিনি ইতিমধ্যে যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, তার সঙ্গে এই বিষয়গুলো সম্পর্কিত।

এছাড়া, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকিও রয়েছে।

ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে, সেই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ঠকাচ্ছে’। তার মতে, এই কারণে তিনি পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করতে চান। এই শুল্কের আওতায় ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) এবং ডিজিটাল পরিষেবা করের মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো এই শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, এই দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর যে শুল্ক নেওয়া হয়, তার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্যের ওপর কম শুল্ক আরোপ করে।

ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন дер লিয়েন ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এর জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চীন, কানাডা, মেক্সিকো, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তাহলে চীনও এর জবাব দেবে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতি ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কারণে অন্যান্য দেশ শুল্ক আরোপ থেকে পুরোপুরি রেহাই পাবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

ইতিমধ্যে, ট্রাম্প ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ এবং বিদেশি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। আগামী মে মাসের শুরুতেই বিদেশি গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই শুল্কগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং এর ফলে মন্দা দেখা দিতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক পরিকল্পনার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।

তবে, ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টারা বলছেন, শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য তারা কর হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রণমুক্তির মতো পদক্ষেপ নেবেন।

এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব বাণিজ্য এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন হবে, তা এখন দেখার বিষয়। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি খরচ বাড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *