মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উদ্দেশ্যে সামরিক বার্তা দিতে ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপে অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান পাঠিয়েছে।
এই অঞ্চলে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে ওয়াশিংটন সামরিক শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে অন্তত ৬টি বি-২ বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে।
খবরটি দিয়েছে সিএনএন।
মার্কিন সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের প্রতি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউস যখন তেহরানের সঙ্গে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তি চাইছে, তখন এই বোমারু বিমানের মোতায়েনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে বিমানগুলো পাঠানো হয়েছে।
এই দ্বীপটি একটি যৌথ মার্কিন-ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ইরান থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩,৯০০ কিলোমিটার।
বেসরকারি স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্ল্যানেট ল্যাবসের তোলা ছবিতে বিমানের অবস্থান দেখা গেছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র সিন পার্নেল নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত বিমান ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই অঞ্চলে কোনো রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীর সংঘাত বাড়ানোর চেষ্টা হলে তার জবাব দিতে প্রস্তুত।
সিএনএনের সামরিক বিশ্লেষক, সাবেক মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্নেল সেড্রিক লেইটনের মতে, ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষদের সতর্ক করার জন্য।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে হয়তো ইরানকে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন বন্ধ করতে বলা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত ইরানের সঙ্গে নতুন পারমাণবিক চুক্তি চাইছে এবং আলোচনার টেবিলে না বসলে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করারও ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি হুতি বিদ্রোহীদের ওপর সামরিক অভিযান জোরদার করেছেন।
এর আগে, হুতি বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়।
হুতিদের দাবি, তারা গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে এই কাজ করছে।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোতে হামলা বন্ধ না করলে এর ফল ভালো হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো আমরা কেবল শুরু করেছি, হুতি এবং ইরানে তাদের পৃষ্ঠপোষকদের জন্য আসল বিপদ এখনো আসেনি।’
ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়েও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত ১৯ মার্চ তিনি বলেছিলেন, তেহরানকে চুক্তিতে আসতে দুই মাস সময় দেওয়া হবে, অন্যথায় ফল খারাপ হবে।
যদিও ইরান সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
পেন্টাগন মুখপাত্র পার্নেল জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইরান বা তার মিত্ররা যদি এই অঞ্চলে মার্কিন কর্মী ও স্বার্থের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সামরিক বিমান চলাচল বিশ্লেষক পিটার লেটন সিএনএনকে বলেন, ৬টি বোমারু বিমানের মোতায়েন সম্ভবত হুতি বিদ্রোহীদের চেয়ে বৃহত্তর লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বি-২ বোমাগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং গভীর ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
এই ধরনের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ইরানের পারমাণবিক ও অস্ত্রাগারও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মোতায়েন করা ৬টি বিমান সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের পুরো বহরের প্রতিনিধিত্ব করে।
খবর অনুযায়ী, ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান বিমানবাহী রণতরী এই মাস জুড়েই ওই অঞ্চলে থাকবে, যদিও এর আগে মার্চ মাসের শেষ নাগাদ এর মোতায়েন শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এছাড়া, ইউএসএস কার্ল ভিনসন বিমানবাহী রণতরীও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মহড়া শেষে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা করবে।
পেন্টাগন মুখপাত্র সিন পার্নেল আরও জানান, নিমিৎজ স্ট্রাইক গ্রুপ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ সক্ষমতা বজায় রাখতে কাজ করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন