বন্ধুত্ব: সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত। আমাদের জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।
শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত, ভালো বন্ধু আমাদের পাশে থাকে, সুখ-দুঃখে ভাগ নেয়। সময়ের সাথে সাথে এই সম্পর্কগুলোতে পরিবর্তন আসে, কারো সাথে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা, আবার কারো সাথে কমে যায়।
এমন অনেক বন্ধু আছেন যাদের আমরা একসময় খুব কাছের মানুষ হিসেবে গণ্য করতাম, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তারা হয়তো আমাদের জীবন থেকে কিছুটা দূরে চলে গিয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়েই আজকের আলোচনা, যেখানে আমরা “ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” বা “দূরত্বের বন্ধু” সম্পর্কে জানবো।
“ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” ধারণাটি আসলে কী?
সোজা ভাষায় বলতে গেলে, “ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” হলো এমন একজন বন্ধু, যিনি সবসময় আপনার সান্নিধ্য পেতে আগ্রহী, কিন্তু যিনি আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে হয়তো সবসময় আমন্ত্রিত হন না। তিনি হয়তো আপনার সাথে দেখা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, কিন্তু আপনার বিশেষ দিনগুলোতে তার উপস্থিতি নাও থাকতে পারে।
এই ধরনের বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তনের কারণ অনেক হতে পারে। হয়তো আপনারা দু’জন আলাদা শহরে বসবাস করছেন, অথবা জীবনযাত্রার ভিন্নতার কারণে আপনাদের মধ্যেকার কথোপকথনগুলো আগের মতো প্রাণবন্ত থাকে না।
এমন পরিস্থিতিতে, পুরোনো বন্ধুত্বের সেই গভীরতা হয়তো বজায় থাকে না।
“ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” হওয়াটা কি খারাপ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” হওয়া সবসময় খারাপ নয়। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. মিরিয়াম কিরমায়ারের মতে, যখন আমরা বুঝতে পারি যে কোনো বন্ধু আমাদের আগের মতো গুরুত্ব দেয় না, তখন আমাদের মধ্যে কিছু নেতিবাচক চিন্তা আসতে পারে।
যেমন – “আমি কি কিছু ভুল করেছি?”, “আমি কি বন্ধুত্বের যোগ্য নই?” তবে, এই ধরনের অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক।
আসলে, “ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” হওয়া কিছু ক্ষেত্রে উপকারীও হতে পারে। এর ফলে, আপনি অন্যদের প্রত্যাশা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
কারো সব আবদার মেটাতে বা সবসময় তার পাশে থাকতে আপনি বাধ্য নন। মনোবিজ্ঞানী ড. আইরিন লেভিনের মতে, “কাউকে আপনার ওপর নির্ভর করতে না দেখে ভালো লাগে। তখন মনে হয়, আপনি কাউকে প্রত্যাখ্যান করছেন না।”
“ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” হওয়ার আরেকটি সুবিধা হলো, আপনি নিজের জন্য বেশি সময় পান। নতুন শখ তৈরি করতে পারেন, নিজের যত্ন নিতে পারেন অথবা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।
তবে, সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। “ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনি নিজেকে গুটিয়ে নিবেন। অতিরিক্ত একাকীত্ব ভালো নয়।
স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে, গভীর এবং পারস্পরিক বন্ধুত্বের প্রয়োজন।
তাহলে উপায় কী?
- নিজের অনুভূতিগুলো বুঝুন: বন্ধুদের থেকে দূরে থাকার কারণগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। আপনি কি আগের মতো সময় কাটাতে চান? নাকি আপনার জীবনে অন্য কিছু প্রয়োজন?
- নতুন বন্ধু তৈরি করুন: সামাজিক সম্পর্কগুলো প্রসারিত করুন। নতুন মানুষের সঙ্গে মিশুন। বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হলে, আপনার সামাজিক জীবন আরও সমৃদ্ধ হবে।
- পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন: যদি কোনো বন্ধু আপনার কাছে এখনও গুরুত্বপূর্ণ হন, তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন.
- ভারসাম্য বজায় রাখুন: গভীর সম্পর্কগুলো যেমন প্রয়োজন, তেমনই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে হালকা সম্পর্কগুলোও গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুত্ব একটি চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন হয়। “ফ্রিঞ্জ ফ্রেন্ড” হওয়া মানে এই নয় যে, সম্পর্কটা সেখানেই শেষ হয়ে গেল।
হয়তো এটি ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর একটি নতুন ধাপ। তাই, এই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখুন এবং জীবনের প্রতিটি সম্পর্ককে উপভোগ করুন।
তথ্য সূত্র: The Guardian