উপসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যের সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে তাদের অসাধারণ সব ভাতের পদগুলোর জন্য। এই অঞ্চলের রান্নাগুলোতে মশলার ব্যবহার হয় প্রচুর, যা খাবারের স্বাদকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায়।
এবার, খ্যাতিমান শেফ নূর মুরাদের দুটি বিশেষ রেসিপি নিয়ে এসেছি আমরা, যেগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনারা তৈরি করতে পারবেন আকর্ষণীয় স্বাদের “উপসাগরীয় স্টাইলের” ভাত।
নূর মুরাদের এই রেসিপিগুলো এসেছে তাঁর “লুগমা” নামক কুকবুক থেকে। এই বইটিতে তিনি উপসাগরীয় অঞ্চলের নানা ধরণের রান্নার রেসিপি দিয়েছেন। তাঁর রেসিপিগুলোতে স্থানীয় উপকরণ এবং রান্নার পদ্ধতিকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথম পদটি হলো “ফেগাআতা” (Fega’ata), যা বাহরাইনের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই বিশেষ পদের প্রধান আকর্ষণ হলো মাংস (সাধারণত মুরগি) এবং ভাত একসাথে রান্না করা হয়, যেখানে সবকিছু একটি পাত্রের নিচে রেখে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে রান্নার ফলে মাংস হয় নরম এবং ভাতের প্রতিটি দানায় মশলার স্বাদ ভালোভাবে প্রবেশ করে।
ফেগাআতা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো:
- ১ কেজি মুরগির রান (হাড় ও চামড়া সহ)
- ১/২ চা চামচ জাফরান, গোলাপ জল ২ চা চামচ
- ২ চা চামচ জিরা গুঁড়ো, ২ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
- ১ চা চামচ হালকা কারি পাউডার, ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১ চা চামচ শুকনো মরিচের গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো
- ২টি শুকনো কালো লেবু (১টি মিহি করে গুঁড়ো করা, অন্যটি অর্ধেক করে বিচি ফেলে দেওয়া)
- লবণ ও গোলমরিচ স্বাদমতো
- ১০০ গ্রাম হলুদ মটরশুঁটি (১ ঘণ্টার জন্য ভিজিয়ে রাখতে হবে)
- ৩টি পেঁয়াজ, আলু ও টমেটো
- ৩টি কাঁচা লঙ্কা, ৩৫ গ্রাম আদা বাটা, ৫ কোয়া রসুন বাটা
- ৪ টেবিল চামচ গলানো ঘি, ৪টি লবঙ্গ, ৩টি তেজপাতা, ৬টি এলাচ
- ৩৭৫ গ্রাম বাসমতি চাল (ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন)
- পরিবেশনের জন্য ধনে পাতা
ফেগাআতা রান্নার পদ্ধতি:
প্রথমে একটি বাটিতে জাফরান, গোলাপ জল এবং ১ টেবিল চামচ গরম জল মিশিয়ে নিন। এরপর অন্য একটি বাটিতে সব মশলার গুঁড়ো এবং কালো লেবুর গুঁড়ো মিশিয়ে নিন।
মুরগির মাংসের সাথে অর্ধেক মশলার মিশ্রণ, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে কিছুক্ষণ মেরিনেট করুন।
এবার একটি পাত্রে মটরশুঁটি সেদ্ধ করে নিন। মটরশুঁটি সেদ্ধ হয়ে গেলে পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা, আদা, রসুন এবং কালো লেবু মিশিয়ে নিন।
এর সাথে বাকি মশলার মিশ্রণ, ঘি এবং লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
একটি বড় নন-স্টিক পাত্রে সামান্য জল গরম করুন, এরপর লবঙ্গ, তেজপাতা, এলাচ ও চাল দিয়ে ৪ মিনিটের জন্য ফুটিয়ে নিন। এরপর জল ঝরিয়ে পাত্রটি শুকনো করে নিন।
পাত্রের নিচে ১ টেবিল চামচ ঘি দিন। এরপর আলুর মিশ্রণের অর্ধেকটা দিয়ে তার উপরে মুরগির মাংস রাখুন, চামড়ার দিক নিচে থাকবে।
এরপর বাকি আলু, জাফরান জল এবং চাল দিয়ে দিন। সবশেষে বাকি ঘি দিন এবং ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে ১৫ মিনিট এবং অল্প আঁচে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট রান্না করুন। পরিবেশনের আগে ধনে পাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
নূর মুরাদের দ্বিতীয় রেসিপিটি হলো “টমেটো, আলু ও জাফরান ভাত”। এই পদটি সাইড ডিশ অথবা প্রধান খাবার হিসেবে পরিবেশন করা যেতে পারে।
এই পদটির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো:
- ১/৩ চা চামচ জাফরান
- ১ চা চামচ গোলাপ জল
- ৪ টেবিল চামচ জলপাই তেল
- ১টি পেঁয়াজ, মিহি করে কাটা
- লবণ ও গোলমরিচ স্বাদমতো
- ৪০০ গ্রাম আলু, টুকরো করা
- ৩৫০ গ্রাম বাসমতি চাল (ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন)
- ৩টি তেজ পাতা, ৫টি লবঙ্গ, ৫টি এলাচ
- ৫০ গ্রাম বাটার
- ৪টি পাকা টমেটো, অর্ধেক করা
- ২টি কাঁচা লঙ্কা
- পার্সলে পাতা (ইচ্ছা অনুযায়ী)
রান্নার পদ্ধতি:
প্রথমে জাফরান, গোলাপ জল এবং ১ টেবিল চামচ গরম জল মিশিয়ে নিন। একটি পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
আলু দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে জল দিন, এরপর ঢাকনা দিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য রান্না করুন।
অন্য একটি পাত্রে চাল, তেজ পাতা ও মশলা দিয়ে ৫ মিনিটের জন্য ফুটিয়ে নিন। এরপর জল ঝরিয়ে নিন।
একটি পাত্রে তেল ও বাটার গরম করুন। টমেটোগুলোর উপরে লবণ ও গোলমরিচ ছিটিয়ে দিন এবং তেলে দিন। এর উপরে অর্ধেকটা ভাত, জাফরান জল এবং আলু দিন। একই পদ্ধতিতে বাকি উপকরণগুলো দিয়ে দিন। ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে ১০ মিনিট এবং অল্প আঁচে ৪৫ মিনিটের জন্য রান্না করুন। পরিবেশনের আগে পার্সলে পাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
উপসাগরীয় অঞ্চলের এই বিশেষ রেসিপিগুলো তৈরি করা খুব সহজ এবং এতে ব্যবহৃত মশলার কারণে খাবারের স্বাদ অসাধারণ হয়। এই রেসিপিগুলো অনুসরণ করে, আপনারা খুব সহজেই ঘরে বসে এই অঞ্চলের খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন। যারা ভিন্ন স্বাদের খাবার পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান