মিয়ানমারে শতাব্দীর ভয়াবহ ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপ থেকে পাঁচ দিন পর জীবিত উদ্ধার এক ব্যক্তি, মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান।
মিয়ানমারে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা এরই মধ্যে তিন হাজারের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পর দেশটির রাজধানী নেপিদোর একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত কয়েক দিনের ভূমিকম্পে দেশটির বিভিন্ন শহর, মন্দির, সেতু এবং মহাসড়ক সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ম্যান্ডালয় এবং সাগাইং শহরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষের আর্তনাদ এখনও শোনা যাচ্ছে।
সেখানকার বাসিন্দারা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। খাবার পানি, ঔষধ এবং জরুরি ত্রাণ সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, আগামী মে মাস নাগাদ বর্ষা শুরু হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
মানবিক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, এই ভূমিকম্প মিয়ানমারের জন্য এক ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে, যেখানে মানবিক পরিস্থিতি আগে থেকেই শোচনীয় ছিল। উদ্ধারকর্মীরা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং হাসপাতালগুলোতে আহতদের উপচে পড়া ভিড়।
এই বিপর্যয়ের শারীরিক ও মানসিক ক্ষত কয়েক দশক ধরে মানুষকে ভোগাবে।
এদিকে, ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জনগণের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
কিছু ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিও দেখা গেছে। যদিও সামরিক জান্তা মানবিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তবে তাদের এমন আচরণে অনেক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ত্রাণকর্মীরা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এক মাসের জন্য যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেছে, যা ত্রাণ কার্যক্রমকে আরও সহজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ, এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা না গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
একইসঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান