দাম কমাতে ব্যবসায়ীদের নয়া ফন্দি! আমদানি শুল্কের কোপ থেকে বাঁচতে…

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আসায় বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন ব্যবসায়ীরা। চীন, কানাডা এবং মেক্সিকোর মত দেশগুলোর উপর শুল্ক বৃদ্ধি করায়, উৎপাদন খরচ কমাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন তারা।

এর ফলে ভোক্তাদের জন্য পণ্য ক্রয়ের অভিজ্ঞতাতেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো—পণ্য থেকে ব্যাটারি সরিয়ে ফেলা, হালকা প্যাকেজিং ব্যবহার করা, এবং ক্রেতাদের নিজেদের জিনিসপত্র অ্যাসেম্বল করার ব্যবস্থা করা। শুধু তাই নয়, অনেক কোম্পানি পণ্যের আকার ছোট করে দিচ্ছে, যা ‘শ্রিঙ্কফ্লেশন’ নামে পরিচিত।

অর্থাৎ, দাম একই রেখে পণ্যের পরিমাণ কমানো হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, খেলনা প্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘অ্যাবাকাস ব্র্যান্ডস ইনকর্পোরেটেড’-এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিজ্ঞান বিষয়ক কিট তৈরিতে কাগজের প্যাকেট ব্যবহার করছে, যা তাদের পণ্যের দাম কমাতে সাহায্য করবে। তারা জানাচ্ছে, প্যাকেজিংয়ের জন্য প্লাস্টিকের পরিবর্তে কার্ডবোর্ড ব্যবহার করার ফলে প্রতি ইউনিটে প্রায় ২৩ সেন্ট সাশ্রয় হবে।

অন্যদিকে, জনপ্রিয় খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘অরোরোরা ওয়ার্ল্ড ইনকর্পোরেটেড’ তাদের খেলনার রঙ কমাচ্ছে, যাতে উৎপাদন খরচ কমানো যায়।

অনেক কোম্পানি পণ্যের প্যাকেজিংয়েও পরিবর্তন আনছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘বেসিক ফান’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, তাদের ‘টনকা ট্রাকস’-এর মত ক্লাসিক খেলনাগুলোর জন্য তিনটি ভিন্ন প্যাকেজিংয়ের বিকল্প নিয়ে তারা কাজ করছেন।

এর মধ্যে একটি হলো—আগের মত বড় বাক্স, যেখানে পণ্যের ভেতরের অংশ দেখা যায়। অন্যটি হলো—কোনো বাক্স ছাড়াই কেবল ট্রে-তে খেলনা রাখা। তৃতীয় বিকল্পটি হলো—সাধারণ কাগজের লেবেল দিয়ে পণ্যটি মোড়ানো।

প্যাকেজিংয়ের এই পরিবর্তনে প্রতি পণ্যের জন্য প্রায় ১.২৫ ডলার থেকে ১.৭৫ ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো হয়তো কিছু ক্ষেত্রে দাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে, কিন্তু শুল্কের কারণে হওয়া ক্ষতি পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব নয়।

আন্তর্জাতিক সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক পরামর্শক কিম্বার্লি কিরকেন্ডাল মনে করেন, ব্যবসায়ীদের এখন স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনাের দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে, যাতে খরচ কমানো যায়।

ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রেও এই শুল্ক নীতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘শার্ট স্টোর’ নামের একটি অনলাইন পোশাক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জানিয়েছেন, তিনি সাধারণত অস্ট্রিয়া থেকে পুরনো বোতাম সংগ্রহ করেন।

কিন্তু শুল্কের কারণে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সরবরাহকারীদের উপর নির্ভর করতে চাইছেন।

ভোক্তাদের উপর এর প্রভাব কেমন হবে? ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে অনেক পণ্যেই হয়তো ক্রেতাদের জিনিসপত্র নিজেরাই তৈরি করতে হতে পারে।

এছাড়াও, পণ্যের আকার ছোট হয়ে আসতে পারে অথবা কিছু অতিরিক্ত জিনিস, যেমন—ব্যাটারি বা আকর্ষণীয় উপহারের বাক্স—সরিয়ে ফেলা হতে পারে।

অর্থনীতিবিদ এডগার ড্বরস্কি মনে করেন, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়লে কোম্পানিগুলো আবারও ‘শ্রিঙ্কফ্লেশন’-এর আশ্রয় নিতে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।

মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন খরচ কমানোর চেষ্টা করছেন, তেমনি ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা এবং পণ্যের গুণগত মানের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *