আতঙ্ক! আমেরিকার বুকে মৌসুমী বৃষ্টি, আসছে ভয়াবহ বন্যা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে চলেছে ভয়ঙ্কর ঝড়, আসন্ন বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে, যার ফলে দেশটির কয়েক কোটি মানুষের জীবনহানির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন যে, এই সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে দেশটির মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে এই ঝড় শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে শিলাবৃষ্টি, শক্তিশালী বাতাস এবং মারাত্মক বন্যা হতে পারে। ওকলাহোমা ও কানসাসের কিছু অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি পড়তে পারে। কানসাসের কানোপলিস লেকের কাছে একটি টর্নেডোর খবর পাওয়া গেছে, এছাড়াও স্যালিনা শহরেও টর্নেডোর সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে, গত রবিবার আরেকটি ঝড় দেশটির মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানে, যা সোমবার পুরো পূর্ব উপকূল জুড়ে বিস্তৃত হয়। এতে সাত জন নিহত হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় আবারও এই ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে। এপ্রিল মাস সাধারণত তীব্র ঝড়ের মৌসুম শুরু হওয়ার সময়, তবে এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে দেশটিতে ৩,২০০টির বেশি টর্নেডো, শিলাবৃষ্টি এবং শক্তিশালী বাতাসের খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই ঝড়টি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। বুধবার এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে এবং বিশাল এলাকা জুড়ে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। মিসিসিপি উপত্যকার ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বুধবার তীব্র ঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছে, এছাড়া টেক্সাস থেকে গ্রেট লেকস পর্যন্ত ৪ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ডালাস, শিকাগো এবং ইন্ডিয়ানাপলিসের মতো শহরগুলোও অন্তর্ভুক্ত।

আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, কানসাস ও মিসৌরির কিছু অংশে বুধবার সকালে ঝড় অব্যাহত থাকতে পারে এবং দুপুরের দিকে এটি মিসিসিপি উপত্যকায় প্রবেশ করে আরও শক্তিশালী হতে পারে। এমনকি কিছু অঞ্চলে “বিস্ফোরক” পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

বুধবার সন্ধ্যায় লুইজিয়ানা ও আরকানসাস থেকে মিশিগান পর্যন্ত তীব্র ঝড় বয়ে যেতে পারে। টেক্সাসেও আরও কিছু ঝড় সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই ঝড়ে শক্তিশালী বাতাস, শিলাবৃষ্টি এবং টর্নেডোর সম্ভবনা রয়েছে। আরকানসাস থেকে ইন্ডিয়ানা এবং ওহাইও পর্যন্ত অঞ্চলে শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী টর্নেডোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। রাতের বেলা টর্নেডোর কারণে হতাহতের সম্ভবনা দিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।

ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, একটি ‘স্টলড ফ্রন্ট’-এর কারণে মেক্সিকো উপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প মিসিসিপি ও ওহাইও উপত্যকায় প্রবেশ করবে, যার ফলে কয়েক দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি চলতে পারে।

বৃহস্পতিবার আরকানসাসের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে কেনটাকি পর্যন্ত অঞ্চলে বন্যার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে আরকানসাস, মিসৌরি, টেনেসী এবং মিসিসিপিতে মারাত্মক বন্যা হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, কিছু কিছু অঞ্চলে প্রতিদিন ৫ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। শনিবারে আরকানসাস, মিসৌরি, ইলিনয়, কেনটাকি এবং টেনেসী-এর সংযোগস্থলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫ ইঞ্চির বেশি হতে পারে।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, “বৃষ্টিপাতের এই পরিমাণ হলে একটি ঐতিহাসিক বন্যা দেখা দিতে পারে।” এই অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন এই ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি সেখানকার মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *