ফ্লোরিডার আকর্ষণ: শিশুদের জন্য বন্য প্রকৃতির এক দারুণ অভিজ্ঞতা!

ফ্লোরিডা: আমেরিকার আকর্ষণীয় গন্তব্য, যেখানে প্রকৃতি আর পরিবারের আনন্দ একসাথে

ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় রাজ্য, যা আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত, উষ্ণ আবহাওয়া আর নানান বিনোদনের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। তবে ফ্লোরিডার আকর্ষণ শুধু ডিজনিল্যান্ড বা ইউনিভার্সাল স্টুডিওসের মত থিম পার্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর ঐতিহাসিক স্থানগুলোও পরিবার নিয়ে ঘোরার জন্য চমৎকার। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ফ্লোরিডা হতে পারে অসাধারণ এক গন্তব্য। আসুন, জেনে নিই ফ্লোরিডার কিছু বিশেষ আকর্ষণ সম্পর্কে যা আপনার পরিবারকে আনন্দ দিতে পারে:

ডলফিন দেখা:

যারা সমুদ্র ভালোবাসেন তাদের জন্য বন্য ডলফিন দেখা একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। ফ্লোরিডার উষ্ণ জলবায়ু আর খাবার সমৃদ্ধ পরিবেশে সারা বছরই ডলফিন দেখা যায়।

বিশেষ করে, এখানকার “কী ওয়েস্ট ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজ”-এ বটলনোজ ডলফিনদের দেখা মেলে। আপনি “অনেস্ট ইকো ট্যুরস”-এর ইলেক্ট্রিক বোটে চড়ে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

এছাড়া, “ডলফিন এক্সপ্লোরার”-এর সাথে মার্কো আইল্যান্ডে গিয়ে প্রকৃতিবিদ বব ম্যাককনের সাথে ডলফিনদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারেন।

এভারগ্লেডসে কায়াকিং:

যারা ইতিহাস ও প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চান, তাদের জন্য এভারগ্লেডস ন্যাশনাল পার্কের “টেন থাউজেন্ড আইল্যান্ডস” একটি আদর্শ জায়গা। এখানকার ম্যানগ্রোভ বনগুলোতে কায়াকিং করার সুযোগ রয়েছে, যেখানে আপনি নানা প্রজাতির পাখি, ম্যানাটি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী দেখতে পারবেন।

৫০০ বছর আগে, ক্যালুসা ইন্ডিয়ান উপজাতি এই দ্বীপগুলোতে বাস করত। আপনি এখানকার ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন।

ফ্লোরিডার ক্লাসিক খাবার:

ফ্লোরিডার খাবারগুলো সাধারণত পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করার মতো। এখানে বিভিন্ন ধরনের সি-ফুড পাওয়া যায়, যেমন – লবস্টার, ক্ল্যামস, এবং চিংড়ি।

কী ওয়েস্টের “হাফ শেল র’ বার”-এ গেলে আপনি তাজা ওস্টার ও অন্যান্য সি-ফুডের স্বাদ নিতে পারবেন। এছাড়া, ফোর্ট মায়ার্সের “ফোর্ড’স গ্যারেজ”-এর মত আমেরিকান ডাইনারগুলোতেও যেতে পারেন, যেখানে বুফে-স্টাইলের খাবার ও ক্লাসিক বার্গার পাওয়া যায়।

মিষ্টি খাবারের জন্য নেপলসের “কিলউইন্স”-এ রয়েছে নানান স্বাদের আইসক্রিম ও ফাজ।

বোর্ডওয়াকের আকর্ষণ:

যারা কুমির দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এভারগ্লেডসের জলাভূমিগুলোতে বোর্ডওয়াক তৈরি করা হয়েছে। এখানে হেঁটে যাওয়ার সময় আপনি কুমির সহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী, যেমন – মাছ ধরার মাকড়সা এবং লাল-পেটের কচ্ছপ দেখতে পারবেন।

নেপলস-এর উত্তরে “কর্করু স্ক্র্যাপ স্যাংচুয়ারি”-র দুই মাইলের বোর্ডওয়াক ধরে হেঁটে যাওয়া একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। এছাড়াও, “সিক্স মাইল সাইপ্রেস স্লাউঘ প্রিজার্ভ”-এর এক মাইলের বোর্ডওয়াক ধরে হেঁটে আপনি বিভিন্ন ধরনের পাখি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখতে পারেন।

কাছিম হাসপাতাল ভ্রমণ:

ছোট্ট শিশুদের ভেটেরিনারি বা পশুচিকিৎসা সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে “টার্টল হসপিটাল”-এ ভ্রমণ একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা। এখানে আহত কচ্ছপদের চিকিৎসা করা হয়।

মেরামারাথনে অবস্থিত এই হাসপাতালে গেলে, আপনি কচ্ছপদের কিভাবে চিকিৎসা করা হয়, তা দেখতে পারবেন। সবুজ কচ্ছপ, হকসবিল কচ্ছপ এবং বিরল প্রজাতির কেম্প’স রিডলি কচ্ছপ সহ বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ এখানে রয়েছে।

ফ্লোরিডা কীস-এর অভিজ্ঞতা:

যারা সমুদ্রের গভীরে ডুব দিতে চান, তাদের জন্য “স্নুবা” একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং-এর মিশ্রণ হলো এই “স্নুবা”।

এখানে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না এবং পানির নিচে ৬ মিটার পর্যন্ত শ্বাস নেওয়া যায়। ইসলামোরার কাছাকাছি কোরাল রিফে “সানডেন্স ওয়াটারস্পোর্টস”-এর মাধ্যমে আপনি এই অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।

যারা স্নুবা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তারা স্নোরকেলিং করে সবুজ কচ্ছপ এবং অ্যাঞ্জেলফিশ দেখতে পারেন।

এডিসন হাউস হোটেল:

যারা বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারকদের সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য টমাস এডিসনের বাড়ি একটি বিশেষ আকর্ষণ। উনিশ শতকের শেষের দিকে, এই বিখ্যাত আবিষ্কারক ফ্লোরিডার ফোর্ট মায়ার্সে একটি অবকাশ যাপন কেন্দ্র তৈরি করেন।

তার বন্ধু হেনরি ফোর্ডও এখানে আসতেন। এখানে এডিসনের পরীক্ষাগার এবং ফোর্ডের পুরনো গাড়ির মডেলগুলো দেখা যায়।

ছোট বাচ্চাদের জন্য এখানে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে পেলিক্যান বিষয়ক স্ক্যাভেঞ্জার হান্ট-এরও ব্যবস্থা রয়েছে।

ফ্লোরিডা, একদিকে যেমন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, তেমনই অন্যদিকে ঐতিহাসিক ও শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতার এক অনন্য স্থান। বাংলাদেশের পরিবারগুলো যারা একটি আকর্ষণীয়, শিক্ষামূলক এবং আনন্দপূর্ণ ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য ফ্লোরিডা হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।

এখানকার বিভিন্ন আকর্ষণগুলো একদিকে যেমন শিশুদের জ্ঞান বৃদ্ধি করবে, তেমনি প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানোর সুযোগ করে দেবে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *