তাইওয়ানের কাছে আবারও সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন, বাড়ছে উদ্বেগ।
তাইওয়ানের আশেপাশে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আবারও মহড়া শুরু করেছে চীন। এই নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো চলা এই মহড়ায় তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলার অনুকরণ করা হচ্ছে।
চীনের সামরিক বাহিনী বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাইওয়ান প্রণালী, পূর্ব চীন সাগর সহ বিভিন্ন স্থানে এই মহড়া চালানো হচ্ছে। মহড়ার অংশ হিসেবে তাইওয়ানের বন্দর এবং জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানার অনুশীলন করা হচ্ছে, যা “স্ট্রেইট থান্ডার-২০২৫এ” নামে পরিচিত।
চীনের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র সিনিয়র কর্নেল শি ই জানান, এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো অবরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সহ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সৈন্যদের সক্ষমতা যাচাই করা। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এই মহড়ায় চীনের শানডং বিমানবাহী রণতরীও অংশ নিয়েছে।
এর মাধ্যমে তাইওয়ানকে “অবরোধ” করার ক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে, যেখানে নৌ ও বিমান শক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
চীনের সামরিক বাহিনী তাদের মহড়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্রের পরিবর্তে ভূমি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে দেখা যায়। তাইওয়ানের তাইনান, হুয়ালিয়েন এবং তাইচুং শহরের উপর বিস্ফোরণের চিত্রও এতে দেখানো হয়েছে, যেখানে সামরিক ঘাঁটি ও বন্দর অবস্থিত।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই চিং-তে এই সামরিক মহড়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীন তাইওয়ানের আশেপাশে ২১টি যুদ্ধজাহাজ এবং ৭১টি বিমান মোতায়েন করেছে, যার মধ্যে শানডং বিমানবাহী রণতরীও অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, চারটি কোস্টগার্ড জাহাজও সেখানে দেখা গেছে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “চীনের এই ধরনের সামরিক মহড়া তাইওয়ান প্রণালীর শান্তিকে শুধু বিঘ্নিত করছে না, বরং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও দুর্বল করে দিচ্ছে।” বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ চীন সাগরের কাছে চালানো মহড়ার উদাহরণও তুলে ধরা হয়।
বুধবার তাইওয়ান জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ৭৬টি চীনা সামরিক বিমান এবং ১৯টি নৌ বা সরকারি জাহাজ তাইওয়ানের জলসীমা ও আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।
এর মধ্যে ৩৭টি বিমান তাইওয়ান প্রণালীর মাঝ বরাবর চিহ্নিত অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত রেখা অতিক্রম করেছে, যা চীন সরকার স্বীকার করে না।
শানডং বিমানবাহী রণতরীও তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে প্রবেশ করেছে।
বেইজিং থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক ক্যাটরিনা ইউ জানিয়েছেন, তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক মহড়া নতুন কিছু নয়। তবে, এই মহড়াগুলো প্রমাণ করে যে তাইওয়ানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বেইজিং কতটা সিরিয়াস।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বারবার বলেছেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে হোক বা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে হোক, তাইওয়ানকে অবশ্যই চীনের সঙ্গে একত্রিত করা হবে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে এই মহড়ার নিন্দা করে বলেছেন, চীন এই অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করছে।
চীনের মেরিটাইম সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঘোষণা করেছে, সামরিক কার্যক্রমের কারণে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ঝেজিয়াং প্রদেশের উত্তরাংশে অবস্থিত একটি এলাকা, যা তাইওয়ান থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে, জাহাজ চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা