উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের জয়, আমেরিকার রাজনীতিতে এর প্রভাব।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য, উইসকনসিনের সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে ডেমোক্রেট সমর্থিত প্রার্থী সুসান ক্রফোর্ড জয়লাভ করেছেন। এই নির্বাচনটি শুধু একটি রাজ্যের বিচারক নির্বাচনের চেয়েও বেশি কিছু ছিল।
এটি ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার বিরোধীদের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের প্রতিফলন। এছাড়াও, এই নির্বাচন দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ধনকুবের এলন মাস্কের প্রভাব কতটা গভীর, তা আরও একবার প্রমাণ করেছে।
উইসকনসিনের এই নির্বাচনটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে হলে, প্রথমে জানতে হবে সেখানকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টগুলোর কাজ হলো দেশের আইন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা করা।
এই আদালতগুলোতে বিচারক নিয়োগ হয় এবং তাদের রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে অনেক সময় রায় দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টে সাতজন বিচারক রয়েছেন।
নির্বাচনের আগে তাদের মধ্যে চারজন ছিলেন উদারপন্থী এবং তিনজন রক্ষণশীল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আদালতের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
নির্বাচনে সুসান ক্রফোর্ড জয়লাভ করায় আদালতের উদারপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা বহাল রইল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান সমর্থিত ব্র্যাড শিমেল।
এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্রফোর্ড প্রমাণ করলেন যে, উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের প্রভাব এখনো বেশ ভালো রয়েছে।
এই নির্বাচনের ফল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ উইসকনসিন একটি ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ, যে রাজ্যে ভোটাররা কোনো একটি দলের প্রতি সবসময় ঝুঁকে থাকে না।
তারা যে কোনো দলকে সমর্থন করতে পারে। নভেম্বরের নির্বাচনে এই রাজ্যের ভোটারদের রায় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য সুসান ক্রফোর্ডকে সমর্থন জুগিয়েছিলেন ডেমোক্রেটরা। অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রার্থী ব্র্যাড শিমেলকে সমর্থন করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে ক্রফোর্ডের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন, যার কোনো প্রমাণ তিনি দেননি।
নির্বাচনে এলন মাস্কের ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ব্র্যাড শিমেলের সমর্থনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, মাস্কের রাজনৈতিক দল এবং তিনি নিজে মিলে প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করেছেন। এছাড়াও, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে মাস্ক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
নির্বাচনে ক্রফোর্ডের জয় প্রমাণ করে যে, এলন মাস্কের বিপুল অর্থ খরচ করেও ভোটের ফল প্রভাবিত করা সব সময় সম্ভব হয় না। এই নির্বাচনের ফল আমেরিকার রাজনীতিতে একটি নতুন বার্তা দিয়েছে।
একই সঙ্গে, এটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রভাব এবং সুইং স্টেটগুলোতে তার সমর্থনের গভীরতা কতটুকু, সেই বিষয়েও নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
নির্বাচনে বিচারক নির্বাচনের পাশাপাশি ভোটার আইডি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে। এই প্রস্তাবের ফলে ভোটারদের আইডি কার্ড দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ডেমোক্রেটরা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছিলেন। তাদের মতে, এর ফলে কিছু ভোটার, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, বয়স্ক এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হবেন।
এছাড়াও, রাজ্যের জনশিক্ষা বিভাগের প্রধান হিসেবে ডেমোক্রেট সমর্থিত জিল আন্ডারলি জয়লাভ করেছেন। এই বিভাগের কাজ হলো রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করা।
নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ট্রাম্প শিক্ষা বিভাগ ভেঙে দেওয়ার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন।
উইসকনসিনের এই নির্বাচনটি ছিল নভেম্বরের নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম বড় নির্বাচন। তাই এর ফল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
এটি প্রমাণ করে, সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশল কেমন হবে। একইসঙ্গে, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির ক্ষমতা এবং অর্থ দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টা কতটা সফল হয়, সেই বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা