ট্রাম্পের শুল্ক: কী হচ্ছে আমেরিকাতে? ৪টি গুরুত্বপূর্ণ চার্টে দেখুন!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য নিয়ে যে শুল্ক নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তা বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যিকভাবে আরও শক্তিশালী করা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া।

তবে, এই পদক্ষেপের ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি অনেক পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির প্রধান শিকার ছিল তাঁর তিনটি বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী—মেক্সিকো, চীন এবং কানাডা। তিনি এই দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে অবৈধ অভিবাসন এবং ফেন্টানাইল পাচার বন্ধে তাদের সহযোগিতা না করার অভিযোগ করেন।

যদিও অতীতে মার্কিন সরকারগুলো সাধারণত জাতীয় নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ শিল্প রক্ষার জন্য শুল্ক ব্যবহার করত, ট্রাম্পের নীতিতে এর বাইরেও ভিন্ন কিছু বিষয় যুক্ত ছিল।

উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প প্রশাসন মার্চ মাসে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই সিদ্ধান্তের ফলে কানাডার মতো দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রকে এই দুটি পণ্যের প্রধান সরবরাহকারী ছিল।

এমনকি এই শুল্ক নীতি কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্পের জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে। অ্যালুমিনিয়াম প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যালকোয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইলিয়াম ওপ্লিংগার সতর্ক করে বলেছিলেন, এই শুল্কের কারণে প্রায় এক লাখ মার্কিনির চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম শিল্পেরই ২০ হাজার কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।

শুধু তাই নয়, ট্রাম্প সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করে যে এপ্রিলের ৩ তারিখ থেকে তৈরি গাড়ির ওপর এবং মে মাসের ৩ তারিখের মধ্যে গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হবে। এর ফলে, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির উৎপাদন বাড়েও, তবে আমদানি করা গাড়ির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব বাণিজ্য নতুন এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বিভিন্ন দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের শুল্ক যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়তে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। এর একটি পরোক্ষ প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত।

সুতরাং, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা বাণিজ্য সম্পর্ক, পণ্যের দাম এবং কর্মসংস্থানের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনো স্পষ্ট না হলেও, বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে, এমনটা ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *