স্কুল খাবারে ফুল ক্রিম দুধ: শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন বিতর্ক!

যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের খাদ্য তালিকায়ায় পূর্ণ-ফ্যাট দুধ ফিরিয়ে আনার বিতর্ক

বিশ্বজুড়ে শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উন্নত বিশ্বে শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলগুলোতে শিশুদের খাবার তালিকায় পূর্ণ-ফ্যাট দুধ (whole milk) ফিরিয়ে আনা যায় কিনা, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে দেশটির স্কুলগুলোতে কম ফ্যাটযুক্ত দুধ পরিবেশন করার নিয়ম চালু হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের মধ্যে স্থূলতা কমানো।

কিন্তু এখন অনেকেই বলছেন, পূর্ণ-ফ্যাট দুধ শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে এবং কম ফ্যাটযুক্ত দুধের চেয়ে এটি বেশি উপকারী হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যনীতি নির্ধারকেরা বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। দেশটির আইনপ্রণেতারা ইতোমধ্যে একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যেখানে স্কুলগুলোতে পূর্ণ-ফ্যাট দুধ এবং ২% ফ্যাটযুক্ত দুধ পরিবেশনের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এর ফলে, বর্তমানে চালু থাকা স্কিম মিল্ক বা ফ্যাটবিহীন দুধের পাশাপাশি এই দুটি বিকল্পও শিক্ষার্থীদের জন্য উপলব্ধ হবে।

এই বিলটি নিয়ে ইতোমধ্যে সিনেটে শুনানিও হয়েছে।

এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, কম ফ্যাটযুক্ত দুধ শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠনে কতটা সহায়ক, সেই বিষয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে।

কম ফ্যাটযুক্ত দুধকে স্থূলতা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, অনেকে মনে করেন পূর্ণ-ফ্যাট দুধে শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।

পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর জন ফেটারম্যান, যিনি এই বিলের সহ-পৃষ্ঠপোষক, তিনি বলেছেন, “শিশুদের সুস্থ ও সবলভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন, এবং পূর্ণ-ফ্যাট দুধে সেই উপাদানগুলো বিদ্যমান।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের খাদ্যতালিকায় পূর্ণ-ফ্যাট দুধ অন্তর্ভুক্ত করার ফলে তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করা যেতে পারে।

এছাড়াও, অনেক শিশু কম ফ্যাটযুক্ত দুধ খেতে পছন্দ করে না, ফলে তারা দুধ পান করা থেকে বিরত থাকে।

এর ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে তারা বঞ্চিত হয়।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কম ফ্যাটযুক্ত দুধ শিশুদের জন্য ভালো।

কারণ, এটি অতিরিক্ত ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগ এবং অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

২০০৯ সালের আগে স্কুলগুলোতে পূর্ণ-ফ্যাট দুধ সরবরাহ করা হতো।

এরপর শিশুদের মধ্যে স্থূলতা কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করতে কম ফ্যাটযুক্ত দুধ সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (USDA) দেশটির স্কুলগুলোতে খাদ্য বিষয়ক নিয়মকানুন তৈরি করে থাকে।

এই নিয়মগুলো দেশটির খাদ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করে তৈরি করা হয়, যা প্রতি পাঁচ বছর পর পর্যালোচনা করা হয়।

১৯৮৫ সাল থেকে এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের কম ফ্যাটযুক্ত বা ফ্যাটবিহীন দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করা উচিত।

বর্তমানে, ২০২৫-২০৩০ সালের জন্য খাদ্য নির্দেশিকা তৈরির কাজ চলছে।

এই বিতর্কের মাঝে, কিছু বিশেষজ্ঞ একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করেছেন।

তাদের মতে, যারা পূর্ণ-ফ্যাট দুধ পান করে, তাদের অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি কম থাকে।

যদিও, এই গবেষণায় দুধ পানের কারণ এবং ওজনের সম্পর্ক সরাসরিভাবে প্রমাণ করা যায়নি।

বর্তমানে, এই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

USDA এবং স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ (HHS) নতুন খাদ্য নির্দেশিকা তৈরি করতে কাজ করছে।

এছাড়া, কংগ্রেসের বিবেচনাধীন থাকা ‘হোল মিল্ক ফর হেলদি কিডস অ্যাক্ট’ নামের বিলটির ভবিষ্যৎও এখনো অনিশ্চিত।

শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তাই, খাদ্য বিষয়ক যেকোনো নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত তথ্য এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব বিবেচনা করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *