ফুলের জাদু: বাগান প্রেমীদের জন্য ১০টি মনোমুগ্ধকর ফুল!

বসন্তের আগমন মানেই বাগানে ফুলের মেলা, নানান ধরনের গাছের নতুন করে জন্ম নেওয়া। কিন্তু এমন কিছু ফুল গাছ আছে যাদের দেখা পাওয়া যায় খুবই অল্প সময়ের জন্য, যেন তারা চোখের পলকেই আসে আর মিলিয়ে যায়।

এদের বলা হয় ‘স্প্রিং এফেমেরালস’। বাইরের দেশে, বিশেষ করে শীতপ্রধান অঞ্চলের বাগানগুলোতে এদের দেখা মেলে। আসুন, আজ পরিচিত হই এই বিশেষ ধরনের ফুল গাছের সঙ্গে।

স্প্রিং এফেমেরালস-এর জীবনকাল খুবই সংক্ষিপ্ত, সাধারণত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ। শীতের শেষে যখন বরফ গলতে শুরু করে, সেই সময় এরা মাটি ফুঁড়ে ওঠে। সূর্যের আলো আর মাটির আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে খুব দ্রুত বাড়ে, ফুল ফোটায়, আর তারপর ধীরে ধীরে আবার মাটির নিচে বিশ্রাম নিতে চলে যায়।

এদের বৈশিষ্ট্য হলো, ফুল ফোটার পর পাতাগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়, এবং গ্রীষ্মের শুরুতেই এরা সম্পূর্ণভাবে মাটির নিচে অদৃশ্য হয়ে যায়।

এই গাছগুলোর প্রধান কাজ হলো, শীতের শেষে ঘুম থেকে ওঠা পোকামাকড়দের খাবার সরবরাহ করা। এছাড়াও, বাগানপ্রেমীদের জন্য এরা অল্প সময়ের জন্য হলেও এক ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য নিয়ে আসে।

যেহেতু আমাদের দেশে এই ধরনের গাছের চাষ সেভাবে হয় না, তাই বিদেশি একটি ধারণা হিসেবেই আমরা এটি দেখবো।

এই গাছগুলো লাগানোর জন্য কিছু বিশেষ যত্ন নিতে হয়। সাধারণত, এদের বীজ বসন্তকালে অথবা গ্রীষ্মের শেষে রোপণ করতে হয়। এমন জায়গায় এদের লাগাতে হয় যেখানে সূর্যের আলো আসে এবং জল দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে।

এছাড়াও, গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য সার এবং মাল্চিং করা যেতে পারে।

আসুন, কিছু পরিচিত স্প্রিং এফেমেরালস-এর সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক:

১. **আজুর ব্লুয়েট (Azure bluet):** ছোট আকারের হালকা নীল রঙের ফুল, যার মাঝে হলুদ কেন্দ্র থাকে। লন বা পাথুরে বাগানে এদের লাগালে ভালো হয়।

উচ্চতা প্রায় ২০ সেন্টিমিটার (৮ ইঞ্চি)।

২. **ব্লাডরুট (Bloodroot):** সাদা রঙের বড় ফুল, যার কেন্দ্র কমলা রঙের হয়ে থাকে। দ্রুত বেড়ে ওঠা এই গাছগুলো মাটি ঢেকে দেয়।

উচ্চতা ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার (১২-১৪ ইঞ্চি)।

৩. **ক্যালিপসো অর্কিড (Calypso orchid):** হালকা বেগুনি, সাদা ও হলুদ রঙের মিশ্রণে গঠিত এক ধরনের সুন্দর ফুল। ছায়াযুক্ত স্থানে এরা ভালো জন্মায়।

উচ্চতা ৫-২০ সেন্টিমিটার (২-৮ ইঞ্চি)।

৪. **ডাচম্যান’স ব্রিচেস (Dutchman’s breeches):** সাদা রঙের সুগন্ধি ফুল, যা দেখতে অনেকটা প্যান্টের মতো। এদের পাতাগুলি খুবই আকর্ষণীয়।

এটি মৌমাছিদের জন্য উপকারী। উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার (১০ ইঞ্চি)।

৫. **ফ্রিঞ্জড ব্লিডিং হার্ট (Fringed bleeding hearts):** গোলাপী রঙের হৃদ আকৃতির ফুলের গুচ্ছ এই গাছের প্রধান আকর্ষণ। আর্দ্র ও পাথুরে মাটিতে এদের ভালো হয়।

পাখির আগমনও ঘটে এদের জন্য। উচ্চতা ৩০-৬০ সেন্টিমিটার (১-২ ফুট)।

৬. **গ্রেট হোয়াইট ট্রিলিয়াম (Great white trillium):** সাদা রঙের বড় আকারের ফুল, যা পরিণত হওয়ার সাথে সাথে গোলাপী বর্ণ ধারণ করে।

এই গাছের ফল ও শিকড়ে সামান্য বিষাক্ততা থাকতে পারে। ছায়া এবং রোদ দুটোতেই এরা বাঁচতে পারে। উচ্চতা ৩০-৯০ সেন্টিমিটার (১-৩ ফুট)।

৭. **ভার্জিনিয়া ব্লুবেল (Virginia bluebells):** প্রথমে গোলাপী এবং পরে নীল রঙে ফোটে। আর্দ্র ও পাথুরে মাটিতে এরা ভালো জন্মায়।

দ্রুত বর্ধনশীল এই গাছগুলো একটি সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে। উচ্চতা ৩০-৯০ সেন্টিমিটার (১-৩ ফুট)।

৮. **রু এনিমন (Rue anemone):** সাদা বা গোলাপী রঙের ফুলযুক্ত গাছ, যার কাণ্ড মেরুন রঙের হয়। এদের পাতাগুলি খুবই আকর্ষণীয়।

এদের পাতা ও কাণ্ড স্পর্শ করলে চামড়ায় সামান্য জ্বালা হতে পারে। উচ্চতা প্রায় ২২ সেন্টিমিটার (৯ ইঞ্চি)।

৯. **ট্রাউট লিলি (Trout lily):** হলুদ রঙের ফুলযুক্ত গাছ, যার পাতাগুলোর উপর কালো বা বাদামী ছোপ থাকে। রোদ অথবা আংশিক ছায়ায় এরা ভালো জন্মায়।

এদের অন্য স্থানে প্রতিস্থাপন করা কঠিন। উচ্চতা প্রায় ২০ সেন্টিমিটার (৮ ইঞ্চি)।

১০. **টুইনলিফ (Twinleaf):** সাদা রঙের তারা আকৃতির ফুলগুলি এই গাছের বৈশিষ্ট্য। এদের পাতাগুলি দুটি অংশে বিভক্ত থাকে।

উচ্চতা ৩০-৯০ সেন্টিমিটার (১-৩ ফুট)।

যদিও আমাদের দেশের জলবায়ু এবং মাটির গঠনের কারণে সরাসরি এই গাছগুলোর চাষ করা কঠিন, তবে বিদেশি এই ধারণা আমাদের বাগান এবং ফুল সম্পর্কে নতুন কিছু ধারণা দিতে পারে। প্রকৃতির এই বিচিত্র রূপ সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *