যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া এক সিরিয়াল ধর্ষকের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। “পিলোকেস র্যাজিস্ট” নামে পরিচিত এই ব্যক্তির মুক্তি এবং তাকে পুনর্বাসনের জন্য একটি আবাসিক এলাকায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
সত্তরোর্ধ্ব ক্রিস্টোফার হাবার্ট নামের ওই ব্যক্তি বহু নারীকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ১৯৭০ এর দশক থেকে শুরু করে তার বিরুদ্ধে একাধিক নারীর ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার “যৌন সহিংসতাকারী (এসভিপি) শর্তসাপেক্ষ মুক্তি প্রোগ্রাম”-এর অধীনে তাকে একটি আবাসিক এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন এবং এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রায় ৭০ মাইল উত্তরে অবস্থিত একটি জনমানবশূন্য এলাকায় হাবার্টকে বসবাসের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ডায়ান সোয়িক সিএনএন-কে জানান, “আমরা নারী, আর সে আমাদের শিকার।” তিনি আরও বলেন, “আমি আগে কখনো দরজা বন্ধ করে রাখিনি, কিন্তু এখন রাখতে হচ্ছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের মতে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করার কারণে তারা এমনিতেই অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমতাবস্থায়, কাছাকাছি কোনো পুলিশ স্টেশনও নেই, যা তাদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভুক্তভোগীদের মতে, হাবার্টের মুক্তি এবং পুনর্বাসন প্রোগ্রাম নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, অতীতেও তিনি একাধিকবার একই ধরনের অপরাধ করেছেন। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আরও ১৫ জন নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালান। ১৯৮২ সালে তাকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর আবারও একই ধরনের অপরাধ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা র্যাচেল পার্সেল জানান, এখন তিনি সবসময় আত্মরক্ষার জন্য স্প্রে নিয়ে চলেন। তিনি বলেন, “কোনো শ্বেতাঙ্গ পুরুষ আমার দিকে এগিয়ে আসলে আমি সতর্ক হয়ে যাই। এমনকি, সে যদি আমার ৩০ ফুটের মধ্যে আসে, তাহলে আমি স্প্রে করব।”
শুধু সাধারণ মানুষই নয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি সুপারভাইজার ক্যাথরিন বার্জার এক চিঠিতে লিখেছেন, “যে ব্যক্তি ৪০ জনের বেশি নারীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে এবং আরও অনেকের ওপর ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে, তাকে কোনোভাবেই মুক্তি দেওয়া উচিত নয়।”
তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আইন মেনেই হাবার্টকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট হসপিটালস (ডিএসএইচ) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আদালত নিশ্চিত করেছেন যে, হাবার্ট সমাজের জন্য কোনো হুমকি নন এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির গতিবিধির ওপর নজরদারির জন্য সার্বক্ষণিক জিপিএস ট্র্যাকিং, গোপন নজরদারি এবং নিয়মিত পরিদর্শনসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মেরি জেটর্স বলেন, “আমি তাকে বিশ্বাস করি না।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই ধরনের অপরাধীরা সব সময় তাদের বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তারা ডাক্তারের কাছে যাবে, কেনাকাটা করতে যাবে। রাস্তায় কার সঙ্গে দেখা হবে, তা কেউ জানে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ক্যালিফোর্নিয়ার এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, অপরাধীদের পুনর্বাসন এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা—এই দুয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন