মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের নির্বাসনে পাঠাতে ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীর তালিকা!

ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিতাড়নের জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেছে একটি ইসরায়েলপন্থী সংগঠন। সম্প্রতি এমনটাই জানা গেছে। এই ঘটনার জেরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হলে, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ বেড়ে যায়। এরপরই, ‘বেতার ইউএসএ’ নামের একটি ইহুদিবাদী সংগঠন প্রতিবাদে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে।

সংগঠনটি দাবি করে, বিক্ষোভকারীরা শুধু ফিলিস্তিনিদের সমর্থনই জানাচ্ছিলো না, বরং ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা ও সহিংসতার উসকানি দিচ্ছিলো।

সংবাদ সংস্থা সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেতার ইউএসএ’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক রস গ্লিক জানান, বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য তারা মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। তাদের মতে, এই পদক্ষেপটি ছিল প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের প্রতিক্রিয়া।

ওই আদেশে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ‘জাতিবিদ্বেষ’ প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছিল।

বেতার ইউএসএ-এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল লেভি সিএনএনকে জানিয়েছেন, তারা কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকশ বিক্ষোভকারী ও কর্মীর নাম জমা দিয়েছেন এবং তাদের বিতাড়নের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, মার্কিন সরকার সরাসরি বেতার ইউএসএ’র দেওয়া তথ্য ব্যবহার করছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এদিকে, ‘ক্যানারি মিশন’-এর মতো কয়েকটি সংগঠনও একই ধরনের কাজ করছে বলে জানা গেছে। এই সংগঠনগুলো অনলাইনে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের নাম, ছবি এবং অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করছে।

তাদের বিরুদ্ধে, হামাসকে সমর্থন এবং ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এসব কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা করে সম্প্রতি আটক হওয়া কয়েকজন শিক্ষাবিদ এবং তাদের সমর্থকরা বলছেন, এটি তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং হয়রানির একটি অংশ। তাদের মতে, এর মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে এবং জনসমক্ষে তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে।

গত বছর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী মাহমুদ খলিলসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদকে বিতাড়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনজীবীরা বলছেন, তাদের মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং বিতাড়নের কোনো ভিত্তি নেই।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর অবশ্য বেতার ইউএসএ বা অন্য কোনো সংগঠনের কাছ থেকে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে, পররাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিও বলেছেন, বিতাড়নের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে তারা কোনো কথা বলতে চান না।

অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র দপ্তর বিদেশি শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করতে ‘গোয়েন্দা তথ্য’ ব্যবহার করেছে, যাদের বিতাড়নযোগ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

অন্যদিকে, বেতার ইউএসএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের শনাক্ত করেছে।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রী সারা রাশিখ জানিয়েছেন, ক্যানারি মিশন তার সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করার পর তিনি অনলাইনে হয়রানি ও হত্যার হুমকি পেতে শুরু করেন। রাশিখের মতে, ক্যানারি মিশন-এর মতো সংগঠনগুলো ফিলিস্তিনপন্থীদের বিরুদ্ধে নজরদারি, হয়রানি এবং নিপীড়ন চালানোর একটি অংশ।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এই সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ উদ্বেগের সৃষ্টি করছে, তবে তারা সাধারণত জনসাধারণের তথ্য ব্যবহার করে কাজ করে, যা সম্ভবত আইনের লঙ্ঘন নয়। তবে, কর্তৃপক্ষের উচিত হবে না, এসব তথ্যের ভিত্তিতে কারো বাকস্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *