গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, বলছে নতুন এক গবেষণা। ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স-এর ‘কস্টস অফ ওয়ার’ প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ২৩২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৩ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে, যা ইতিহাসে কোনো সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধ এবং আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্মিলিত মৃতের সংখ্যার চেয়েও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন গাজায়।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, এটিকে সাংবাদিকদের জন্য ‘সবচেয়ে খারাপ’ সংঘাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় কতজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে সরাসরি লক্ষ্য করে মারা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে, অনেক সাংবাদিক ইসরায়েলের বোমা হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন, যা উদ্বেগের বিষয়।
প্যারিস-ভিত্তিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সম্ভবত ৩৫ জন সাংবাদিককে তাদের কাজের কারণে লক্ষ্য করে হত্যা করেছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হামজা দা’দুহ-এর নিহত হওয়ার ঘটনা এর মধ্যে অন্যতম।
৭ই জানুয়ারি, ২০২৪-এ গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামজা যে গাড়িতে ছিলেন, সেটিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।
হামজা ছিলেন আল জাজিরার গাজা ব্যুরো প্রধান ওয়াইল দা’দুহ-এর পরিবারের পঞ্চম সদস্য, যিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।
সম্প্রতি নিহত হওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন আল জাজিরার সাংবাদিক হোসাম শাবাত।
২৪শে মার্চ, ইসরায়েলি হামলায় তার গাড়িতে আঘাত হানলে তিনি নিহত হন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শাবাতকে হামাসের গোপন অপারেটিভ হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।
তবে, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক সংগঠন ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে)-এর মতে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রায়ই এমন অভিযোগ আনে, যার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারে না।
গাজায় বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত হওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিকরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
কস্টস অফ ওয়ার প্রকল্পের মতে, বর্তমানে এখানকার সাংবাদিকদের কাজের পরিবেশ খুবই প্রতিকূল।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধের সহিংসতা এবং সেন্সরশিপের কারণে সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলো সাংবাদিকতার জন্য ‘কবরস্থানে’ পরিণত হচ্ছে, যার চরম উদাহরণ হলো গাজা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা