মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক কমিটির (ইউএসওপিসি) পক্ষ থেকে একজন কোচ এবং একজন পরিচালককে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যেখানে জানা যায় যে, ঐ কোচ এক তরুণী বায়্যাথলেটকে যৌন নির্যাতন করেছেন এবং এর ফলশ্রুতিতে ওই নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বরখাস্ত হওয়া কোচের নাম গ্যারি কলিয়ান্ডার এবং পরিচালকের নাম আইলিন কেরি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলিয়ান্ডার, যিনি মেইন উইন্টার স্পোর্টস সেন্টারে গ্রেস বুটট নামের এক তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিতেন, তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বুটট যখন ১৫ বছর বয়সী ছিলেন, তখন ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে প্রায় চার বছর ধরে কলিয়ান্ডার তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে বুটট এতটাই মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন যে, তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
ঘটনার পর কলিয়ান্ডার তার চাকরি ছেড়ে দেন। পরে তিনি ইউএস প্যারালিম্পিক নর্ডিক টিমে যোগ দেন। অন্যদিকে, ঘটনার সময় কেরি মেইন সেন্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং বুটটের মায়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সেন্টার ত্যাগ করার পর কেরি কোচ হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরে প্যারালিম্পিক দলের পরিচালক পদে উন্নীত হন। কলিয়ান্ডার যখন দলে যোগ দেন, তখন তিনিই দায়িত্বে ছিলেন।
ইউএস সেন্টার ফর সেফস্পোর্ট, যা অলিম্পিক ক্রীড়াগুলিতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য তৈরি করা হয়েছে, তারা কলিয়ান্ডারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। উল্লেখ্য, ল্যারি নাসার নামক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন জিমন্যাস্টিক্সে যৌন নির্যাতনের কেলেঙ্কারির পরেই এই সংস্থা তৈরি করা হয়েছিল।
কলিয়ান্ডারের আইনজীবী বলেছেন, কর্তৃপক্ষ কলিয়ান্ডারকে বরখাস্ত করার কারণ জানায়নি। কলিয়ান্ডার তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন।
আহত বুটট-এর অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, কলিয়ান্ডার যখন তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন, তখন তিনি বুটটকে অনেক বেশি মনোযোগ দিতেন এবং তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। বুটটের বয়স ১৮ বছর হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে, তিনি চুম্বন, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ এবং মুখমৈথুন করতে শুরু করেন। বুটটের থেরাপিস্টের একটি রিপোর্টে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
বুটট জানিয়েছেন, তিনি কলিয়ান্ডারকে এই ধরনের আচরণ বন্ধ করতে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তিনি শোনেননি। এর ফলে তিনি মারাত্মক হতাশায় ভুগতে শুরু করেন এবং নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। থেরাপিস্টের নোট অনুযায়ী, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে থেরাপিস্ট জ্যাাকলিন পাউলি-রিজ কলিয়ান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে, বুটট গুরুতর হতাশায় ভুগছেন এবং তার কোচিং বন্ধ করা উচিত। কিন্তু বুটটের আত্মহত্যার চেষ্টার পরেই কলিয়ান্ডার কোচিং বন্ধ করেন।
বুটট পরে প্রতিযোগিতায় ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন, তবে সেন্টার এবং তার দলের সদস্যদের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার হন। তারা কলিয়ান্ডারের চলে যাওয়ার জন্য তাকেই দায়ী করে। বুটটের মা, কারেন গোরম্যান, ঘটনার বিষয়ে কেরি এবং সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছিলেন।
২০১১ সালে, বুটট মেইন হিউম্যান রাইটস কমিশনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি মেইন স্পোর্টস সেন্টারের বিরুদ্ধে কলিয়ান্ডারের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে সেন্টার $৭৫,০০০ (পঁচাত্তর হাজার মার্কিন ডলার) দিতে রাজি হয় এবং বুটট খেলা ছেড়ে দেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস