ঘুমহীন জীবনের যন্ত্রণার অবসান: অবশেষে ডাক্তারের পরামর্শে মিলল স্বস্তি!

নতুন আলো: অনিদ্রা থেকে মুক্তি, এক নারীর দীর্ঘ চল্লিশ বছরের যাত্রা

ঘুম মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ, সুস্থ জীবনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। কিন্তু ঘুমের এই প্রয়োজনীয়তা থেকে বঞ্চিত হলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

এমনই এক কঠিন বাস্তবতার শিকার হয়েছিলেন লেখিকা কোর্টনি ম্যাম। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ায় (insomnia) ভুগেছেন তিনি, আর এই দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক সমস্যার গভীরে যেতে পারেননি।

অবশেষে, একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঠিক অনুসন্ধানে তাঁর এই সমস্যার মূল কারণটি ধরা পড়ে।

কোর্টনি ম্যামের অনিদ্রা সমস্যার শুরুটা হয় কৈশোরে। রাতে ঘুমোতে পারতেন না, মাঝেমধ্যে ঘুম এলেও ভোর ৪টার দিকে ঘুম ভেঙে যেত।

দিনের পর দিন ঘুমের অভাবে তিনি মানসিক এবং শারীরিক নানা সমস্যায় জর্জরিত হতেন। চিকিৎসকদের কাছে গেলে তাঁরা বিষয়টিকে মানসিক সমস্যা বা হরমোনের পরিবর্তনের ফল হিসেবে দেখতেন।

কেউ বলতেন, এটা মেয়েদের সাধারণ সমস্যা। ঘুমের ওষুধ খেয়েও কোনো লাভ হয়নি, বরং তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে।

অবশেষে, ৪৫ বছর বয়সে তিনি একজন ইএনটি (ENT – কান, নাক ও গলার চিকিৎসক) বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান, তাঁর আসল সমস্যা হলো নাকের ভেতরের ভালভের দুর্বলতা এবং শ্বাসনালীতে বাতাসের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা (anterior nasal valve collapse and upper airway resistance syndrome)।

ছোটবেলায় ব্রেস (brace) পরার কারণে চোয়ালের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছিল, ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে হতো না। এই শারীরিক সমস্যার কারণেই তাঁর অনিদ্রা হতো।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা হলো ঘুমের ব্যাধি, যা রাতে ঘুমাতে অসুবিধা বা ঘুমের মধ্যে জেগে থাকার প্রবণতা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

এর ফলে দিনের বেলায় ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব এবং মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে। অনিদ্রার কারণ হতে পারে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ঘুমের পরিবেশ এবং কিছু শারীরিক সমস্যা।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, তিনি অস্ত্রোপচার করান। অস্ত্রোপচারের ফলে তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয় এবং শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে।

তবে, এখনো পর্যন্ত তিনি পুরোপুরি ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাননি। ঘুমের জন্য এখন তিনি কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ফর ইনসোমনিয়া (cognitive behavioral therapy for insomnia – CBT-I) এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।

কোর্টনি ম্যামের এই অভিজ্ঞতা আমাদের ঘুমের গুরুত্ব এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো উপলব্ধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়।

আমাদের সমাজে ঘুমের সমস্যা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না, যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

তাই, ঘুমের সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এই নিবন্ধটি কোর্টনি ম্যামের অভিজ্ঞতা অবলম্বনে লেখা, যাThe Guardian -এ প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *