টেসলার বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে, বিশ্বখ্যাত এই বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারক সংস্থার বিক্রি ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ককে ঘিরে বিতর্ক এবং অন্যান্য গাড়ি প্রস্তুতকারকদের থেকে আসা তীব্র প্রতিযোগিতা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেসলা গত তিন মাসে ৩,৩৬,৬৮১ টি গাড়ি সরবরাহ করেছে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৩,৮৬,৮১০। এই পরিসংখ্যান গত তিন বছরের মধ্যে তাদের সবচেয়ে খারাপ ব্যবসার চিত্র। এক বছরে প্রায় ৫০,০০০ গাড়ির বিক্রি কমেছে।
এই পরিস্থিতিতে, ইলন মাস্কের কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপের কারণে টেসলার শোরুমের বাইরে প্রতিবাদ হয়েছে। এমনকি তাদের চার্জিং স্টেশনগুলোতে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে, যা সম্ভাব্য ক্রেতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে।
ইউরোপে টেসলার বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ইউরোপিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, বছরের প্রথম দুই মাসে সেখানে ৪৯ শতাংশ বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। যদিও ওই অঞ্চলে সামগ্রিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ২৮ শতাংশ বেড়েছে, তবুও টেসলার এই খারাপ ফল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের কট্টর-ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মাস্কের সমর্থন ইউরোপীয় গ্রাহকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তবে রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরেও, টেসলাকে এখন কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে চীনা গাড়ি প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে তাদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। চীন বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির সবচেয়ে বড় বাজার এবং টেসলার জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি (BYD) একাই গত তিন মাসে ৪,১৬,০০০ এর বেশি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক যাত্রী গাড়ি বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এর ফলে, বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে টেসলার শীর্ষস্থান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অতীতে, টেসলা সাধারণত পুরো বছরের বিক্রয়ে এগিয়ে ছিল, যদিও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বিওয়াইডি তাদের ছাড়িয়ে গেছে। তবে বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, ২০২৫ সাল নাগাদ টেসলা তাদের শীর্ষস্থান হারাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে এই পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, টেসলার এই দুর্বলতা অন্যান্য নির্মাতাদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যারা অপেক্ষাকৃত কম দামে ভালো মানের গাড়ি সরবরাহ করতে সক্ষম। ভবিষ্যতে, এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়তে পারে, যেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে টেসলার গাড়ি সহজলভ্য নয়, তবে বিশ্ব বাজারের এই পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে এখানকার গ্রাহকরা অন্যান্য ব্র্যান্ডের আরও সাশ্রয়ী মূল্যের বৈদ্যুতিক গাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।
তথ্য সূত্র: CNN