ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি হাঙ্গেরি সফরে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর এটি ছিল তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
যেহেতু নেতানিয়াহু এমন একটি দেশে গিয়েছেন যা আইসিসির এখতিয়ারের বাইরে, তাই তার এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছেন। আইসিসি’র এই ঘোষণার পর নেতানিয়াহু এমন কোনো দেশ সফর করা থেকে বিরত ছিলেন, যারা আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সরকার আইসিসির এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করে নেতানিয়াহুকে সমর্থন জুগিয়েছে। হাঙ্গেরি নেতানিয়াহুর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে।
নেতানিয়াহুর এই সফরকালে বুদাপেস্টের হলোকস্ট জাদুঘর পরিদর্শনের কথা রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নেওয়ারও কথা রয়েছে তার।
তবে সফরের শেষ দিকে তার কর্মসূচি কিছুটা ফাঁকা রাখা হয়েছে। যদিও এটি শবেতের সঙ্গে মিলে যায়, তবুও অনেকে মনে করছেন, নেতানিয়াহু আগেভাগেই দেশে ফিরতে পারতেন।
বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন করে অভিযান শুরুর প্রেক্ষাপটে এমনটা বেশি আলোচনায় আসছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর জন্য হাঙ্গেরি সফর আইসিসির বিরুদ্ধে একটি বার্তা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে তিনি দেখাতে চাইছেন যে, তিনি এখনও একজন স্বাভাবিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে পারেন।
নেতানিয়াহু এবং অরবানের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে গভীর মিল রয়েছে। দুজনেই তাদের নিজ নিজ দেশে বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগের শিকার।
ইসরায়েলের বিরোধী দলের একজন উপদেষ্টা ইয়ায়ির জিভান মনে করেন, নেতানিয়াহুর এই সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কমে যাওয়ার সময়ে হাঙ্গেরির সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এমন একজনের সঙ্গে জোট বাঁধা, যিনি গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন, তা উদ্বেগের কারণ।
অন্যদিকে, হাঙ্গেরিতেও প্রধানমন্ত্রী অরবানের শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে। বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই সফর অরবানের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে তিনি হাঙ্গেরীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলতে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে চাইছেন।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, নেতানিয়াহুর এই সফর আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। একইসঙ্গে, এটি ইসরায়েলি নেতার ওপর নতুন আন্তর্জাতিক চাপের একটি উদাহরণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন