কেন অটিজম শনাক্ত হয় না নারী ও মেয়েদের মধ্যে?

অটিজম: মেয়েদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে কেন এত জটিলতা?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে, তবে মেয়ে শিশুদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ে এখনো অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। সাধারণভাবে, অটিজমকে পুরুষের সমস্যা হিসেবেই দেখা হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং গবেষণায়ও সেই ধারণাই প্রবল ছিল। এর ফলস্বরূপ, অনেক মেয়ে শিশু অটিজমের শিকার হলেও, তাদের রোগ নির্ণয় হতে অনেক দেরি হয় বা অনেক সময় ভুল রোগ নির্ণয় করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো মেয়েদের মধ্যে ছেলেদের থেকে ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। অনেক সময় মেয়েরা তাদের সমস্যাগুলো লুকিয়ে রাখতে বা “ক্যামোফ্লেজ” করতে চেষ্টা করে।

তারা সামাজিক উদ্বেগে ভোগে, চুপচাপ থাকে, অথবা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ফলে তাদের মধ্যে অটিজমের লক্ষণগুলো সহজে ধরা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সামাজিক উদ্বেগ, খাদ্যাভ্যাস ঘটিত সমস্যা অথবা ব্যক্তিত্বের গড়মিল—ইত্যাদি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়, কিন্তু অটিজম নির্ণয় করা হয় না।

যুক্তরাজ্যের অ্যাস্টন ব্রেইন সেন্টারের অধ্যাপক ও নিউরোইমেজিং বিশেষজ্ঞ জিনা রিপন এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তিনি তার নতুন বই “অফ দ্য স্পেকট্রাম: হোয়াই দ্য সায়েন্স অফ অটিজম হ্যাজ ফেইলড উইমেন অ্যান্ড গার্লস”-এ তুলে ধরেছেন, কেন বিজ্ঞান এবং চিকিৎসকরা মেয়েদের মধ্যে অটিজমকে কম গুরুত্ব দিয়েছেন।

রিপনের গবেষণা অনুযায়ী, অটিজম বিষয়ক গবেষণায় মেয়েদের অংশগ্রহণ খুবই কম থাকে। অনেক গবেষণায় হয় মেয়েদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, অথবা খুবই সামান্য সংখ্যক মেয়েকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

রিপন মনে করেন, আগে ধারণা করা হতো অটিজম একটি “পুরুষের সমস্যা”। তাই ছেলেদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অটিজম নির্ণয়ের পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে।

ফলে মেয়েদের ক্ষেত্রে, একই ধরনের সমস্যা দেখা গেলেও, তাদের অটিজম আছে কিনা, সেই বিষয়টি সেভাবে বিবেচনা করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ক্লাসে কোনো মেয়ের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে, তাকে “লাজুক” বা “সামাজিক উদ্বেগে” আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হতো।

মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে অটিজমের উপসর্গগুলো ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় তারা তাদের সমস্যাগুলো প্রকাশ করতে পারে না। রিপন তাদের “ক্যামেলিয়ন” বা গিরগিটির সঙ্গে তুলনা করেছেন, যারা পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজম নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বৈশিষ্ট্যগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। তাদের সংবেদনশীলতার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।

যেমন—কাপড়ের অস্বস্তি, উজ্জ্বল আলো, বা শব্দ—ইত্যাদি বিষয়গুলো অনেক মেয়ের মধ্যে বেশি দেখা যায়। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশেও অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অটিজম শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

তবে মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের জটিলতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষক এবং সমাজের সকলেরই এ বিষয়ে বিশেষভাবে নজর রাখা উচিত।

অটিজম আক্রান্ত মেয়ে শিশুদের সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনকে আরও উন্নত করা সম্ভব। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সমাজের মূল স্রোতে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *