কর্মক্ষেত্রে পোশাকের ধরন: আকর্ষণীয়তার দিন শেষ, বাড়ছে সাদামাটা পোশাকের চল।
বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে পোশাকের ধরনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। একসময়কার “অফিস সাইরেন” স্টাইল, যা আবেদনময়ী এবং আকর্ষণীয় কর্পোরেট পোশাকের প্রতীক ছিল, তার চল এখন প্রায় নেই বললেই চলে।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এখন বেশি দেখা যাচ্ছে সাদামাটা, সাধারণ পোশাকের প্রতি আগ্রহ।
এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা অর্থনৈতিক চাপ ও উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন। একদিকে যেমন কর্মী ছাঁটাইয়ের (layoffs) আশঙ্কা বাড়ছে, তেমনই মন্দা আসারও সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাদের পেশাগত জীবনে স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে। পোশাকের ক্ষেত্রেও এই পরিবর্তনটি দৃশ্যমান।
কর্মক্ষেত্রে কী পোশাক পরবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এই ‘সিদ্ধান্তের জটিলতা’ (decision fatigue) এড়াতে অনেকেই এখন একটি নির্দিষ্ট ধরনের পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
তাদের মতে, পোশাকের ক্ষেত্রে সাদামাটা ও একই ধরনের ডিজাইন বেছে নিলে সময় বাঁচে, যা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগানো যেতে পারে।
এই পরিবর্তনের একটি বড় উদাহরণ হলেন অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। তিনি সবসময় কালো রঙের টি-শার্ট, জিন্স এবং স্নিকার্স পরতেন।
তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এখন তার এই সাধারণ পোশাকের ধারা অনুসরণ করছেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন ফ্যাশনের জটিলতা এড়িয়ে চলেন, তেমনই পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে পারেন।
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তনের মূল কারণ হল অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সমাজের রক্ষণশীলতার দিকে ঝোঁক। আগে যেখানে উজ্জ্বল রঙের পোশাক বা আকর্ষণীয় ডিজাইন পরার প্রবণতা ছিল, সেখানে এখন আরামদায়ক এবং সাধারণ পোশাকের চাহিদা বাড়ছে।
তবে, “অফিস সাইরেন” স্টাইল যে একেবারে হারিয়ে গেছে, তা নয়। অনেক তরুণী কর্মক্ষেত্র শেষে রাতের পার্টিতে বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় এই ধরনের পোশাক পরতে পছন্দ করেন।
তাদের মতে, এটি এক ধরনের “পালানোর” (escapism) সুযোগ, যেখানে তারা নিজেদের ইচ্ছামত সাজতে পারেন।
পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন একটি বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তরুণ প্রজন্ম এখন তাদের পোশাকের মাধ্যমে শুধু ফ্যাশন নয়, বরং তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং পেশাগত স্থিতিশীলতার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে চাইছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian