আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান কি আবার আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে? সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই এই সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। বিশেষ করে, তালেবান নেতারা এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
**আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এবং সম্পর্ক পরিবর্তনের ইঙ্গিত**
আফগানিস্তানে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চলেছে, যেখানে প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। এরপর ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান দ্রুত ক্ষমতা দখল করে। বাইডেন প্রশাসনের এই সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ বিতর্কও সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই তালেবান বিভিন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তালেবান নেতারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রে একটি কার্যালয় খোলারও প্রস্তাব দিয়েছে, যা দূতাবাস নাও হতে পারে তবে আফগান কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
**আলোচনা এবং মুক্তি: সম্পর্কের নতুন দিক?**
গত মাসে কাবুলে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তালেবানের আলোচনা হয়, যেখানে একজন মার্কিন বন্দীর মুক্তির বিষয়টি প্রধান ছিল। এর পাশাপাশি, তালেবান নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এমনকি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি জানায়।
তালেবান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে কয়েকজন মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। এর মধ্যে একজন ছিলেন মার্কিন বিমান সংস্থার টেকনিশিয়ান এবং অন্যজন নারী। এই মুক্তিগুলোকে শুভেচ্ছা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা হাক্কানি নেটওয়ার্কের তিনজন সদস্যের ওপর থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। হাক্কানি নেটওয়ার্ক দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে এবং এখনো তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
**ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা**
আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল। ট্রাম্প নিজেও তালেবান যোদ্ধাদের ‘ভালো যোদ্ধা’ এবং ‘খুব বুদ্ধিমান’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
তবে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি তীব্র সমালোচনা করেন।
বর্তমানে, তালেবান নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। তারা মনে করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে।
**ভবিষ্যতের জন্য কিছু প্রশ্ন**
যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে তা আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তালেবান যদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সম্পর্কের উন্নতি কঠিন হবে।
বর্তমানে, কোনো দেশই তালেবানকে আফগানিস্তানের সরকারি দল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে, তালেবান কূটনৈতিক অঙ্গনে তাদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের রাষ্ট্রদূত রয়েছে এবং কাতারে তাদের একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ও বিদ্যমান।
আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে তালেবানকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন সেই লক্ষ্যের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন