শিরোনাম: শিংলস ভ্যাকসিনের মাধ্যমে স্মৃতিভ্রংশতা প্রতিরোধের সম্ভাবনা: নতুন গবেষণা
স্মৃতিভ্রংশতা (Dementia), যা মানুষের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনার ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে কেড়ে নেয়, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
সম্প্রতি, একটি নতুন গবেষণা জানাচ্ছে যে শিংলস (Shingles) রোগের ভ্যাকসিন স্মৃতিভ্রংশতা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ওয়েলসের প্রাপ্তবয়স্কদের উপর করা এই গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নির্দিষ্ট শিংলস ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
গবেষণাটি মূলত, Zostavax নামক একটি ভ্যাকসিনের উপর কেন্দ্রীভূত ছিল, যা বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না। গবেষকরা ২ লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি বয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, যারা এই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে পরবর্তী সাত বছরে স্মৃতিভ্রংশতা হওয়ার সম্ভাবনা, যারা ভ্যাকসিন নেননি তাদের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম ছিল।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক, পাসকাল গেল্ডসেটজার (Pascal Geldsetzer) এই গবেষণার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, “এই প্রথম আমরা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারছি যে, শিংলস ভ্যাকসিন স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কমাতে পারে। যদি সত্যিই এটি একটি কার্যকারিতা প্রমাণ করতে পারে, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার।”
গবেষণাটি পরিচালনার জন্য গবেষকরা ওয়েলসে ভ্যাকসিন প্রয়োগের নীতিকে কাজে লাগিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বা তার পরে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য Zostavax ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু যারা এর আগে জন্মেছিলেন, তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
এই নীতি গবেষকদের দুটি দলের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশতার হারের তুলনা করার সুযোগ করে দেয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মহিলাদের মধ্যে ভ্যাকসিনের প্রভাব বেশি শক্তিশালী ছিল। যদিও ঠিক কিভাবে এই ভ্যাকসিন স্মৃতিভ্রংশতা প্রতিরোধে সাহায্য করে, তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণের কথা বলছেন।
তাদের মতে, ভ্যাকসিনটি হয়তো স্নায়ু তন্ত্রের প্রদাহ কমায় অথবা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক অনুপম জেনা (Anupam Jena) এই গবেষণার গভীর তাৎপর্য তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেছেন, “যদিও হার্পিস জোস্টার (herpes zoster) ভ্যাকসিন স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কিভাবে কমায়, তা এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে এর ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভ্যাকসিন একটি সাশ্রয়ী মূল্যের হস্তক্ষেপ হতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দিতে পারে।”
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৫৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ স্মৃতিভ্রংশতায় আক্রান্ত এবং এটি বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। ব্রিটেনে প্রতি তিনজন ব্যক্তির মধ্যে একজনের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও রোগটি নিরাময়যোগ্য নয়, তবে কিছু ওষুধ এর গতি কিছুটাslow করতে পারে।
এই গবেষণাটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শিংলস এবং স্মৃতিভ্রংশতা উভয়ই বাংলাদেশের মানুষের জন্য উদ্বেগের বিষয়। যদিও বাংলাদেশে এই গবেষণা সরাসরি প্রযোজ্য নাও হতে পারে, তবে এর ফলাফল ভবিষ্যতে আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষ করে, স্মৃতিভ্রংশতা প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian