পয়েন্ট জমিয়ে তাইওয়ানের নাগরিকত্ব! অবিশ্বাস্য ভ্রমণ কাহিনী

বহু প্রজন্মের আমেরিকানদের মতোই, ক্যাথরিন ফ্যান বেড়ে উঠেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তবে তার পরিবারের সংস্কৃতি ছিল তাইওয়ানের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তার বাবা-মা তাইওয়ানের নাগরিক হওয়ায়, তিনি প্রায়ই সেখানে যেতেন।

সম্প্রতি, তিনি তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে গিয়েছিলেন, তবে এবার তার এই ভ্রমণের বিশেষ একটি উদ্দেশ্য ছিল—তাইওয়ানের দ্বৈত নাগরিকত্ব অর্জন করা।

ফ্যান দীর্ঘদিন ধরেই তাইওয়ানের সঙ্গে তার সম্পর্ককে আরও ‘আনুষ্ঠানিক’ করতে আগ্রহী ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার কারণে, সেখানকার কঠোর আবাসিক নিয়ম তাকে বাধা দিচ্ছিল।

তবে ২০২৪ সালে সেই বিধিনিষেধ শিথিল করা হয় এবং তিনি সুযোগ পাওয়া মাত্র আবেদন করেন।

নাগরিকত্বের চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন করতে, তাকে ব্যক্তিগতভাবে তাইওয়ান যেতে হয়েছিল।

ফ্যানের ক্রেডিট কার্ডের পুরস্কার, হোটেল পয়েন্ট এবং এয়ারলাইন মাইলগুলোর কল্যাণে তাইওয়ানের নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া প্রায় বিনামূল্যে সম্পন্ন হয়। এই ভ্রমণের জন্য তাকে ট্যাক্স ও ফি বাবদ মাত্র ১৫০ ডলার খরচ করতে হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬,০০০ টাকার সমান।

যেখানে এই ভ্রমণের জন্য সাধারণত প্রায় ৬,৭০০ ডলার (প্রায় ৭,২৫,০০০ টাকা) খরচ হতো।

আসলে, ফ্যান তার নতুন পাসপোর্ট হাতে নিয়ে তাইওয়ান ত্যাগ করেন। কিভাবে তিনি এটা করতে পেরেছিলেন, আসুন জেনে নিই।

ভ্রমণের পরিকল্পনা

ফ্যান তার ভ্রমণের জন্য টিকিট বুক করার ক্ষেত্রে পুরষ্কারের অর্থ ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাইপের বিজনেস ক্লাসের টিকিট এবং দুই রাতের জন্য একটি হোটেলের ব্যবস্থা। (ভ্রমণের অধিকাংশ সময় তিনি পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন।)

ফ্যান খুব দ্রুততার সঙ্গে তার ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন। তিনি যাত্রা করার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ডেল্টা এয়ারলাইন্স, ইভা এয়ার (তাইওয়ানের দুটি বৃহত্তম এয়ারলাইন্সের একটি) এবং অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসের টিকিট বুক করেন।

ফ্যানের জন্য মূল বিষয় ছিল পুরস্কারের জন্য উপলব্ধ সিট খুঁজে বের করা। এর জন্য তিনি ‘সিটস ডট এয়ারো’ নামক একটি পরিষেবা ব্যবহার করেন।

এই পরিষেবাটি ব্যবহারকারীকে তাদের পছন্দের পুরস্কার ফ্লাইট উপলব্ধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমেল পাঠায়।

প্রথম ফ্লাইট বুক করার জন্য, সিয়াটল থেকে তাইপের ডেল্টা রুটে, ফ্যান তার বিদ্যমান অ্যাকাউন্টে থাকা ৩৪,০০০ মাইলের সাথে আমেরিকান এক্সপ্রেস মেম্বারশিপ রিওয়ার্ডস থেকে আরও ৬০,০০০ পয়েন্ট যোগ করেন।

এর মাধ্যমে তিনি ৯৩,৫০০ মাইলের বিনিময়ে ডেল্টা ওয়ান স্যুইটে করে যাত্রা করেন, যার জন্য তাকে ট্যাক্স বাবদ ৫.৬০ ডলার দিতে হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার জন্য ফ্যান ইউরোপ হয়ে দীর্ঘ পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাইপেই থেকে ভিয়েনা পর্যন্ত ইভা এয়ারের বিজনেস ক্লাসে আসন বুক করার জন্য তিনি ৮৭,৫০০ এয়ার কানাডা এরোপ্ল্যান পয়েন্ট ব্যবহার করেন।

এরপর তিনি অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসে ভিয়েনা থেকে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছান। এর জন্য তাকে ট্যাক্স ও ফি বাবদ ১৫০ ডলার খরচ করতে হয়।

এয়ার কানাডা এরোপ্ল্যান পয়েন্ট পাওয়ার জন্য, তিনি তাদের ওয়েবসাইটে উপলব্ধ একটি সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেজ আলটিমেট রিওয়ার্ডস থেকে পয়েন্ট স্থানান্তর করেন।

হোটেল ব্যবস্থা

ফ্যানের দুই রাতের হোটেল থাকার ব্যবস্থা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নববর্ষের আগের কয়েকদিন আগে তিনি শেরাটন গ্র্যান্ড তাইপে বুক করেন।

এর জন্য তাকে প্রতি রাতের জন্য ৩৯,০০০ ম্যারিয়ট বনভয় পয়েন্ট খরচ করতে হয়েছে। সে সময় এর নগদ মূল্য ছিল প্রায় ৫০০ ডলার (প্রায় ৫৪,০০০ টাকা)।

ফ্যান সতর্ক করে বলেন, “তাইপে বিশ্বের এমন কয়েকটি জায়গার মধ্যে একটি, যেখানে আগে থেকে পরিকল্পনা না করলে প্রধান হোটেলগুলোতে সিট পাওয়া কঠিন।”

বিজনেস ক্লাসের আরাম এবং শেরাটনে আত্মীয়দের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করার পাশাপাশি, ফ্যানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পুরস্কার এবং মাইল ব্যবহার করে তাইওয়ানের নাগরিকত্ব সম্পন্ন করা।

ফ্যান বলেন, “আমার ঐতিহ্যের সঙ্গে একটি দৃশ্যমান এবং আইনি সম্পর্ক থাকাটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এখন।”

ভ্রমণকারীদের জন্য টিপস

ফ্যান জানান, ছোট ছোট কেনাকাটাগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার পয়েন্ট ও মাইলের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তিনি নিয়মিত তার দৈনন্দিন কাজে পয়েন্ট সংগ্রহ করেন, যা সহজে পয়েন্ট অর্জনের একটি উপায়।

তিনি আরও বলেন, “আমি পয়েন্ট অর্জনের জন্য র‍্যাকুটেনের মতো শপিং পোর্টাল ব্যবহারের একজন বড় সমর্থক।” র‍্যাকুটেনের মতো অনলাইন শপিং পোর্টালগুলোতে কেনাকাটা করে আপনি ক্রেডিট কার্ডের রিওয়ার্ড, এয়ারলাইন্স মাইল অথবা নগদ টাকা উপার্জন করতে পারেন।

তথ্যসূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *