মহাকাশে পাঠানো মটরশুঁটি, তৈরি হল ‘স্পেস মিসো’, স্বাদ কেমন?

মহাকাশে জন্ম নিল ‘স্পেস মিসো’: ভিনগ্রহে খাবারের দিগন্ত?

মহাকাশে মানুষের জীবনযাত্রা কেমন হবে, সেই বিষয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের শেষ নেই। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station – ISS) সম্প্রতি এমনই এক অত্যাশ্চর্য পরীক্ষা চালানো হয়েছে, যেখানে তৈরি করা হয়েছে ‘স্পেস মিসো’।

জাপানি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এই মিসো হলো এক প্রকারের ফারমেন্টেড সয়াবিন পেস্ট। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই গবেষণা মহাকাশে জীবনের সম্ভাবনা এবং নভোচারীদের জন্য খাদ্যতালিকার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (Massachusetts Institute of Technology – MIT)-এর বিজ্ঞানী ম্যাগি কোব্লেন্টজ এবং ডেনমার্কের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি (Technical University of Denmark)-র জোশুয়া ইভান্স-এর নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে তারা রান্না করা সয়াবিনের পেস্ট-এর একটি ছোট পাত্র আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠান।

সেখানে এটি এক মাস ধরে রেখে দেওয়া হয়, এরপর পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ‘স্পেস মিসো’-র স্বাদ ছিল পৃথিবীর মিসোর মতোই, তবে এর মধ্যে একটা বিশেষ পার্থক্য ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর স্বাদ ছিল আরও তীব্র, যা এটিকে আরও ‘রোস্টেড’ এবং বাদামের মতো বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে।

এই পরীক্ষার জন্য, পৃথিবীর দুটি স্থানেও একই সময়ে মিসো তৈরি করা হয়েছিল – একটি যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজে এবং অন্যটি ডেনমার্কে।

জোশুয়া ইভান্স জানান, “আমরা আসলে বুঝতে পারছিলাম না, মহাকাশে ফারমেন্টেশন কেমন হবে। কারণ, আগে কখনো এমনটা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “স্পেস মিসো-টি ছিল গাঢ় রঙের এবং এর মধ্যে ঝাঁকুনি লাগার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এটা স্বাভাবিক, কারণ এটি পৃথিবীর মিসোর চেয়ে অনেক বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে। প্রথমবার এর গন্ধ এবং স্বাদ নেওয়াটা ছিল খুবই আনন্দের।

মহাকাশে অতি সামান্য মাধ্যাকর্ষণ এবং উচ্চমাত্রার বিকিরণের কারণে অণুজীব কীভাবে বৃদ্ধি পায় এবং বিপাক ঘটায়, তা এই পরীক্ষার মূল বিষয় ছিল। ইভান্স আরও উল্লেখ করেন, এই গবেষণা শুধু খাদ্য বিষয়ক গবেষণাই নয়, বরং এটি মহাকাশে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতিতেও সাহায্য করবে।

ঐতিহ্যগতভাবে, মিসো তৈরি হয় ভিজিয়ে রাখা সয়াবিন, জল, লবণ এবং কোজি (এক ধরণের ছত্রাক) দিয়ে। এর স্বতন্ত্র স্বাদ তৈরি হতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগে।

এই খাবারে প্রোবায়োটিক-এর মতো উপকারী উপাদান থাকে, যা হজমক্ষমতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা এখন ‘স্পেস মিসো’-র পুষ্টিগুণ এবং এর মধ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করছেন।

মহাকাশে শুধু মিসো নয়, বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের সবজি ফলানোরও চেষ্টা করছেন। এর আগে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) নভোচারীরা তাদের প্রথম চাষ করা মরিচ দিয়ে একটি ‘টাকো পার্টি’ উপভোগ করেছিলেন।

জাপানের একটি কোম্পানি, ‘আসাহি শুজো’ (Asahi Shuzo) নামের একটি সংস্থা, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS)-এর কিবো পরীক্ষাগারে তাদের তৈরি ‘দ্যাসাই’ ব্র্যান্ডের বিশেষ sake (জাপানি মদ)-এর পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে।

২০২৫ সালের মধ্যে তাদের মহাকাশে মদ তৈরির সরঞ্জাম পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযানে খাবারের এই নতুন উদ্ভাবনগুলো নভোচারীদের জন্য শুধু স্বাদ ও পুষ্টির ভিন্নতা আনবে না, বরং মহাকাশে মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করতে সহায়ক হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *